নিউজ ডেস্ক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি দুর্নীতির কবল থেকে বাঁচানোর জন্য আবেদন করলেন খোদ প্রধান শিক্ষক। গত মঙ্গলবার বিকেলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিয়োগ বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি বাঁচানোর দাবি করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমুন্নাহার। একই সঙ্গে সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এদিকে বিদ্যালয়টিতে তালা লাগানোকে কেন্দ্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনিসুজামান লুইচ, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন এবং নিয়োগের কোনো কাগজপত্র সঠিকভাবে যাছাই-বাছাই করছেন না। সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রধান শিক্ষককে কোনো প্রকার না জানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ে নিয়ে এসে শিক্ষক-শিক্ষিকা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই একজন করে নতুন শিক্ষকের আগমন ঘটে, যা খুবই বিব্রতকর। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ২৩ জন বৈধ নিয়োগ বলে বলছেন। এ ছাড়াও আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন যা আমাদের জানানো হয় না। কয়েকদিন আগে টাকা নিয়েছে আরও ১৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেবে বলে। আগে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিকট থেকে তিন লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের নিকট থেকে ৮-১০ লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রেজুলেশন খাতা বাড়ি নিয়ে রাখেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরা স্বাক্ষরও সভাপতি তাঁর বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমুন্নাহার জানান, ‘বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিজের ইচ্ছামত বিদ্যালয়টি নিয়ে খেলছেন। এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিন্তু তাঁর সে বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি ক্রয় করার জন্য টাকা তোলা হলেও সে টাকা গায়েব। এসব কী হচ্ছে বিষয়টি বুঝতে নাম পেরে গত কয়েকদিন আগে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে চিঠি দিয়ে বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভার মিটিং কল করি। কিন্তু অজানা কারণে পরিচালনা পর্ষদের কেউ হাজির হলেন না। তাঁদের ফোনেও যোগাযোগ করে কোনো প্রকার ব্যবস্থা হলো না। ফলে বাধ্য হয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবার অভিযোগ করি। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বাবার দেওয়া জমিতে বিদ্যালয়টি হচ্ছে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না করে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতেও চাপ দিচ্ছে। এ বিষয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা তালা মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমীন আক্তার জানান, তাঁকে প্রথমে দুই লাখ টাকা নিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে আবারো সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আরও এক লাখ টাকা জরুরিভাবে দিতে বলেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনিসুজামান লুইচ। তিনি অভিযোগ করেন, পরে একজনের নিকট ৮ লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও জানেন না। কীভাবে নিয়োগ হল, কোথা থেকে নিয়োগ হল কেউই জানেন না। তাই নিয়োগ-বাণিজ্যে অতিষ্ট হয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।’ বিদ্যালয়ের জমিদাতা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার মেয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হতেই স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েটির জমিটি লিখিয়ে নিতে চাইছেন আনিসুজামান লুইচ। আমার জামাই মারা যাওয়ায় শিক্ষিত মেয়েটার কর্মসংস্থানের জন্য আমি জমিটি দিতে চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা অভিনয় করছেন। এর আগেও জাহাঙ্গীর নামের একজনকে নিয়োগ দিয়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার আমার মেয়েটাকে নিয়ে খেলছেন। জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিলে কী হবে আমরা বুঝতে পারছি না। তাই চাকরি নিশ্চিয়তা না পাওয়া পর্যন্ত জমিটি রেজিস্ট্রি দিচ্ছি না।’ এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত আনিসুজ্জামান লুইচ বলেন, ‘আমি বাইরে আছি, এখন বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি বসে সমাধান করা হবে।’ গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর হাবিবুল বাশার বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। আমি তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।’ গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, ‘বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের নিকট একটি অভিযোগ এসেছে। আমি তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি।’