নিউজ ডেস্ক:
ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই জায়গায় জঙ্গি হামলা ও হামলাচেষ্টার পর নড়েচড়ে বসেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। জঙ্গিরা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ।
বিশেষ করে বিদেশিদের স্বার্থে ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে চেকপোস্ট, প্রতিবন্ধক গেট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে আর্চওয়ে ও লাগেজ স্ক্যানার। তবে লাগেজ স্ক্যানের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশের দাবি, জঙ্গিদের প্রতিরোধে ঢাকার সব থানা এলাকায় প্রতি রাতে নিয়মিত ব্লক রেইড দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের ঠিক আগ মুহূর্তে ঢাকার আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের ভেতরে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত এক যুবক। এ ঘটনার পরই দেশের সব বিমানবন্দর ও কারাগারে বিশেষ সতর্কতা জারি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় র্যাবের চেকপোস্টে র্যাবের গুলিতে নিহত হয় আরো এক যুবক। র্যাবের দাবি, এই যুবককে চেকপোস্টে থামার সংকেত দিলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে গুলি করা হয়। নিহতের ব্যাগ ও শরীর থেকে কয়েকটি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব থানা এলাকায় ব্লক রেইডের নির্দেশ আগে থেকেই দেওয়া ছিল।
শনিবার রাতে ঢাকার শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, সংসদ ভবন এলাকার সড়কগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন থানা সূত্র জানিয়েছে, নিয়মিত ব্লক রেইড হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন যেসব জায়গায় জঙ্গি বা অপরাধী থাকতে পারে সেসব জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
বনানী-গুলশান এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার প্রস্তুতি হিসেবে শনিবার বিকেলে ওই এলাকার উপকমিশনার এস এম মোশতাক আহমেদ খানের কার্যালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে গুলশান-বানানী এলাকার হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হবে। পাশাপাশি প্রতিটি হোটেল বা রেস্তোরাঁয় আর্চওয়ে ও প্রবেশ মুখে প্রতিবন্ধক গেট স্থাপন করা হবে। সেখানে তল্লাশি শেষে লোকজন ঢুকতে পারবেন। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে হোটেলে লাগেজ স্ক্যানার বসাতে হবে।
তবে লাগেজ স্ক্যানার বসাতে যেহেতু বেশি টাকা খরচ হবে, সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাবেন ব্যবসায়ীরা।
বৈঠক শেষে মোশতাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুলশান-বনানী এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল দল সড়কে থাকবে। এ ছাড়া, চেকপোস্ট, আর্চওয়ে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি রাতে ব্লক রেইড পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো।
কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন ফকির জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি রাতেই তার এলাকায় ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে আটক করা হয়নি।
তিনি বলেন, ব্লক রেইড পরিচালনার পাশাপাশি কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ধারণা দিচ্ছে। সচেতন করার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া সন্তানদের চলফেরার ওপর নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে অভিভাবকদের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন,যেহেতু ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, সেহেতু আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছি। জননিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এক মুহূর্তের জন্য আপস করব না।