মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ গেল বছর আম রপ্তানিতে সফলতার পর এবার ব্যপক প্রস্তুতি নিচ্ছে মেহেরপুরের আম চাষিরা। বাগানে বাগানে চলছে আমে ব্যাগ পরানোর উৎসব। এসব আম যাবে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নে। গেল বছরে জেলা থেকে শুধু হিমসাগর আম বিদেশে গেলেও এবার ল্যাংড়া ও আ¤্রপালি আম নেবে বায়াররা। তবে চলতি মৌসূমে উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে কাঙ্খিত দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শংকায় আছেন চুক্তিবদ্ধ চাষিরা।
মেহেরপুর শহরের সাইদুর রহমান জানান, গত বছরে ১৫ হাজার আম দিয়েছিলেন বায়ারদের। ভাল লাভ পাওয়ায় এবার দেড় লক্ষ আমে ব্যাগ পরানোর সীদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু চলতি বছরে আম উৎপাদনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুন। প্রতিটি আম ব্যাগ পরাতে খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ টাকা। আম সংগ্রহ পর্যন্ত রপ্তানিযোগ্য এক কেজি আম উৎপাদন করতে খরচ দাঁড়াবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আবার বায়ররা বাছাইকৃত আম ছাড়া নেবেননা। ফলে ছোট ও দাগ আম নিয়ে বিপাকে পড়বেন চাষিরা। গত মৌসূমে কেজি প্রতি আমের দাম পাওয়া গেছে ৯৫ টাকা। এ বছরে একই দাম থাকলে লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। ফলে আম রপ্তানিতে আগ্রহ হারাবেন কৃষকেরা।
গত বছরে আম রপ্তানির জন্য বায়ারদের সাথে কন্ট্রাকট ফার্মিংয়ে চুক্তিবদ্ধ হয় জেলার ২৪ জন আম চাষি। তবে আম দেয় মাত্র ১০ থেকে ১২ জন। আম রপ্তানিতে সফল হওয়ায় চলতি মৌসূমে বায়ারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে শতাধীক আম চাষি। বাজার দর ভাল পাওয়ায় বিদেশে আম পাঠানোর আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের মাঝে। জেলার হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, আ¤্রপালি আমের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। স্বাধে ও গন্ধে অতুলনীয়। গত মৌসূমে শুধু হিমসাগর আম বিদেশে রপ্তানি হলেও এবার ল্যাংড়া ও আ¤্রপালি আম নেওয়ার সীদ্ধান্ত নিয়েছে বায়াররা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের চুক্তিবদ্ধ চাষি সাখাওয়াত জানান, এ বছরে গাছে গাছে আম এসেছিল প্রচুর। ভাল ফলনের স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু বেশ দফায় দফায় কালবৈশাখীর ঝড়ে কেড়ে নিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। এবারও তিনিও বিদেশে আম পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু বায়ারদের কাছ থেকে কাঙ্খিত দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শংকায় আছেন। আবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গাছের বেশিরভাগই আম। কিন্তু আম বাছাইয়ের সময় বেশি পরিমান বাদ পড়লে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদের। এতে লোকসানের পাল্লা ভারি হবে চাষিদের।
তবে আশার বাণি শুনালেন বায়ার প্রতিনিধি মফিজুর রহমান। তিনি বলেন দাম নিয়ে শংকার কোন কারণ নেয় চাষিদের। কৃষকদের খরচের কথা মাথায় রেখে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগ ও চাষিরা একসাথে বসে মূল্য নির্ধারন করবেন। চাষিরা যাতে কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ্য না হয় সে দিক খেয়াল রেখেই আমের মূল্য নির্ধারন করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চীন ও জাপান থেকে ব্যাগ আমদানি করে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে চাষিদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রপ্তানিকৃত এ ব্যাগ কতটা নিরাপদ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরে ব্যাগ পরানো এসব আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি করা হয়েছে। সেখান থেকে রাজশাহী ও সাতক্ষিরা আমের উপর খারাপ রিপোর্ট আসলেও মেহেরপুরের আম ছিল শতভাগ নিরাপদ। ফলে এ বছরে বায়ারদের লক্ষ্য মেহেরপুরের আমের উপর।
গেল মৌসূমে মেহেরপুর থেকে ১২ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানি করা হলেও এবার কৃষিবিভাগ লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে ২০০ মেট্রিকটন।