নিউজ ডেস্ক:
দেশে এবছর ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। এরমধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ টি।
চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোটাতাজাকৃত গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ২০ সহ¯্রাধিক এবং ভেড়া-ছাগল ১৮ লাখ ২৬ সহ¯্রাধিক। বাকিগুলো অনুৎপাদনশীল গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক আজ রোববার বাসস’কে জানান, ‘গতবছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি চার লাখ ২২ হাজারের বেশি। গতবারের চেয়ে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১১ লাখ ৩৫ হাজারটি বেশী হবে।’
তিনি বলেন, ‘গতবছরের কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি চার লাখ ২২ সহ¯্রাধিককে চাহিদা হিসেবে ধরলে, এবার চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ ৩৫ হাজার পশু বেশি রয়েছে।’
ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, এবছর কোরবানির হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি ছোট হাটে অন্তত ১টি, বড়হাটে ২টি করে এবং ঢাকার গাবতলীহাটে ৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। রাজধানীর প্রতিটি টিমে ১ জন ভেটেরিনারি সার্জন, ১জন টেকনিক্যাল কর্মী (ভিএফএ/ইউএলএ) এবং ১জন করে শেরে বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নি ভেটেরিনারি সার্জন রয়েছেন। তারা সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। একইসাথে মোবাইল মেডিক্যাল টিমও কাজ করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, গতবছর সারাদেশের ২ হাজার ৩৬২টি পশুর হাটে মোট ১ হাজার ১৯৩টি মেডিক্যাল টিম দায়িত্ব পালন করে। গতবছরের মতো এবছরও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গবাদিপশুর খামারগুলোতে স্বাস্থ্যহানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ল্যাবরেটরি-পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রাণি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধের বিক্রয় ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, সীমান্তবর্তী এলাকায় এসব দ্রব্যের চোরাইপথে আসা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে মনিটরিং এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসন পল্লী¬চিকিৎসকগণ এসবের ব্যবহাররোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের দিন কোরবানির পশু বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এজন্য প্রায় ২১ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবারে নতুন সংযুক্ত ৩৬ ওয়ার্ডসহ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ১ হাজার ৫৪টি পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত ও নির্ধারিত সময়েই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং বর্জ্য অপসারণের প্রায় ৫ লাখ পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করবে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল ইসলাম আজ বাসস’কে জানান, এই সিটিতে সাড়ে ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে মাঠে থাকবে।
তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারেণ এই সিটিতে বর্জ্যবাহী ট্রাক ১৫০টি, ডাম্প ট্রাক ১৯টি, ৫টি পে-লোডার, ৩টি হুইল ডোজার, ১১টি পানির গাড়ি (জেট স্প্রেসহ), স্কিড লোডার ৪টি, বেকহো লোডার ৪টি, ট্রাক (আউটসোর্সিং) ৮০টি, বর্জ্যবাহী ব্যাগ থাকবে ৪ লাখ পিস, ব্লিচিং পাউডার ৪০ হাজার কেজি, স্যাভলন ১০০ লিটার ও ফিনাইল ২০০ লিটার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বুলডোজার, ২টি লং আর্ম স্কেভেটর, ৩টি চেইন ডোজার, ২টি হুইলডোজার কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন দুই মেয়র। আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ৫ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাদুল ইসলাম বাসস’কে জানান, বর্জ্য অপসারণে প্রায় ২১ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মধ্যে ডিএসসিসি’র ১১ হাজার ২৭১ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে মাঠে থাকবেন। এখানে ১০টি পে-লোডারসহ ৩৫০টি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানিকরাসহ বর্জ্য যেখানে-সেখানে না ফেলা এবং কোরবানির আগে-পরে ঢাকা সিটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনদ্বয়ের সহযোগিতায় মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সকল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হবে বলেও জানান তিনি।