বিনোদন ডেস্ক:
ডার্ক কমেডি অথবা স্যাটায়ার—কোনো সংজ্ঞায়ই ফেলব না। কেবল উপহাসের মোড়কে ধর্ম-রাজনীতি-জীবন—এই তিনের মিশেলে বানানো তিনটি ছবির কথা বলব। শিল্পমানের বিচারে সবচেয়ে নম্বর কম পাওয়া ছবিটি সবচেয়ে জনপ্রিয় আর সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া ছবিটি অনেকে চেনেই না।
২০০৯ সালে ‘থ্রি ইডিয়টস’ বানিয়ে হুলুস্থুল ফেলে দেন নির্মাতা রাজ কুমার হিরানি। আমির, সালমান যোশী আর মাধবনের এককাট্টা অভিনয় তাক লাগিয়ে দেয়। হিরানি এবার বাস্তবতার বাইরে গিয়ে স্যাটায়ারের সুরে ধর্ম ও রাজনীতির ব্যবসা তুলে আনার চেষ্টা করলেন।
মানুষের প্রতিদিনের দিনযাপনের অভ্যাস তার চোখে পড়ে না। তাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হিরানি আমদানি করলেন এক এলিয়েনকে, নাম ‘পিকে’। পিকে এসে হারিয়ে ফেলে তার বাহনের রিমোট। সে রিমোট খুঁজতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয় এক টিভি সাংবাদিকের সঙ্গে। দুজনে মিলে রিমোট খুঁজতে খুঁজতেই একে একে উদ্ধার করে ধর্ম নিয়ে ব্যবসার নানা দিক।
ধর্ম ব্যবসার সঙ্গে ভয়ংকরভাবে জড়িত রাজনীতি। ‘পিকে’ ছবিতে সেদিকেই আঙুল তুললেন হিরানি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে ব্যবসা তুলে আনলেও এই ধর্মই যে মানুষের জীবনের অনুভূতির সঙ্গে মেশানো, তা হিরানি তুলে আনতে পারেননি সমাজবাস্তবতা দিয়ে।
এই দুয়ের মিশেল দেখতে হলে তাকাতে হবে মারাঠি ছবি ‘দেওল’-এর দিকে। তরুণ চলচ্চিত্রকার উমেশ বিনায়ক কুলকার্নি যেন সমাজ ছেঁকে তুলে এনেছেন এই ছবির গল্প। গ্রামের দরিদ্র যুবক কেশ্যা। তার একমাত্র সম্বল গরু কার্ডি। গ্রামের মাতবর ভাউয়ের গরু দেখাশোনা করে কেশ্যা। একদিন ভরদুপুরে গাঁয়ের মাঠে একমাত্র গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ে কেশ্যা। স্বপ্নে দেখা পায় আধ্যাত্মিকতার। এই খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রামে।
ধীরে ধীরে গাছ ও কার্ডিকে ঘিরে গ্রামের মানুষের ভক্তি বেড়ে চলে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনীতি। তৈরি হয় তীর্থকেন্দ্র।
গ্রামের একমাত্র বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি আনা কুলকার্নি। মন খারাপ করে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কেশ্যা পছন্দ করে আনাকে। ভালো লাগে তার যুক্তিপূর্ণ কথা। আবার মনের মধ্যে ধর্মকে ঘিরে যে শীতল অনুভূতি, তাকেও সে ফেলে দিতে পারে না।
মহারাষ্ট্রের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ আর গিরিশ কুলকার্নির অভিনয়, মুগ্ধতা ছড়াবে ফ্রেমে ফ্রেমে। মারাঠি সিনেমার যে গল্পই নায়কপ্রধান, তা আবার প্রমাণ করেছে ছবিটি। নানা পাটেকর, সোনালি কুলকার্নি, কিশোর কদম, শ্রীকান্ত যাদবের অভিনয় চোখে লেগে থাকবে।
শেষ করব আমির খানেরই একটি ছবি দিয়ে। আমিরের অভিনয় নয়, প্রযোজিত ছবি। আমির-সংশ্লিষ্ট ছবিগুলোর মধ্যে ‘পিপলি লাইভ’কেই রাখব সবার আগে। পিপলি গ্রামের দুই ভাই নাত্থা আর বুধিয়া। ব্যাংক লোন পরিশোধ থেকে মুক্তি পেতে নাত্থা পরিকল্পনা করে আত্মহত্যার। গ্রামের এক চায়ের দোকানে আলাপকালে এই খবর জেনে যায় সাংবাদিক রাকেশ। নিউজ হতেই নাত্থার বাড়ির দিকে ছুটতে থাকেন সাংবাদিকেরা। চলে আসেন রাজনৈতিক নেতারা। নাত্থা কবে আত্মহত্যা করবে, কীভাবে করবে, এ নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা।
নাত্থার বাড়ির অন্দরে টিভি সাংবাদিকদের ভিড়ে অতিষ্ঠ পরিবার। পিপলি গ্রামে যেন মেলা বসেছে। লোকে লোকারণ্য। নাত্থা যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে, এ কারণে রাখা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। একদিন রাজনৈতিক এক পক্ষের মাধ্যমে কিডন্যাপ হয় নাত্থা। তারা জ্বালিয়ে দেয় গ্রাম।
গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারকে ঘিরে রাজনীতি ও সংবাদপত্রের চালচিত্র উপহাসের মোড়কে তুলে ধরেন পরিচালক আনুশা রিজভি। নাত্থার চরিত্রে ওমকার দাশ মানিকপুরির অভিনয় আজও চোখে ভাসে। নওয়াজুদ্দিনের মতো জাঁদরেল অভিনেতা ছিলেন সাংবাদিক রাকেশের চরিত্রে।