আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার ও নিহত ৬ জনের পরিবারকে ৪০ হাজার করে টাকা প্রদানসহ চাকরির আশ্বাস দিল পরিবহন কর্তৃপক্ষ

0
35

ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় সরোজগঞ্জে ঢাকাগামী একটি কোচ আটকানোর অভিযোগে রয়েল পরিবহনের পাল্টা সড়ক অবরোধ

নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গত দুদিন ধরে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সদর উপজেলা ইউএনওর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে প্রশংসিত হলেও রয়েল পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিশ্চুপ থাকাটা বেশ সমালোচিত হয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় রয়েল পরিবহন কর্তৃপক্ষ রয়েল পরিবহনের একটি কোচের ধাক্কায় নিহত ৬ জনের পরিবারকে নগদ ৪০ হাজার করে টাকা প্রদান করে এবং একইসঙ্গে ওই সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের রয়েল পরিবহনে চাকরি আশ্বাস দিলে তিতুদহ-সরোজগঞ্জসহ অত্র সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিবাদে থামিয়ে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানায়। কিন্তু এ সময় অনেকে বলেও ফেলেন একটি জীবনের দাম মাত্র ৪০ হাজার টাকা, অন্তত ১ লাখ টাকা করে তো প্রতি পরিবারকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েল পরিবহন কর্তৃপক্ষের ছিল। এর আগে গতকাল সকালে রয়েল পরিবহনের একটি কোচ চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে সরোজগঞ্জ বাজারে স্থানীয় জনগণ নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঢাকাগামী ওই কোচটি আটকে দেয়। এরপর ওই কোচটি ঢাকায় যেতে বাধা পেয়ে আবার চুয়াডাঙ্গায় ফিরে আসে। পরে ফিরে আসা কোচটিসহ মোট চারটি কোচ সরোজগঞ্জ বাজারের অদূরে ছয় মাইল নামকস্থানে পৌঁছে প্রধান সড়কে গাড়ি আড়াআড়িভাবে দিয়ে পাল্টা সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে রয়েল পরিবহনের চারটি কোচের চালক-হেলপারদের সড়কের ওপর থেকে বাসগুলোকে সরিয়ে নিতে বার বার অনুরোধ করার পরেও বাস সরিয়ে না নিলে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে। এ সময় সড়ক অবরোধের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হলে রয়েল এক্সপ্রেসের বয়কটের দাবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে স্ট্যাটাস শেয়ার করেন। যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার হওয়া স্ট্যাটাসে অনেকে রয়েল পরিবহন বয়কটের দাবি করে বিভিন্ন কমেন্ট করতে দেখা যায়। এ ছাড়া সড়ক অবরোধ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে মুহূর্তেই ৫০ হাজারের মতো ভিউ হতে দেখা যায়। রয়েল পরিবহনের এক চালককে একটি ভিডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায় কোম্পানির নির্দেশে নাকি তারা বাস নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে। যাহোক পরে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ সময় সেখানে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন এবং রয়েল পরিবহনের ম্যানেজার ফিট্টু মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এরপরে সড়ক থেকে বাস সরিয়ে নিলে সড়কে চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো এলাকাজুড়ে সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা জোরদার টহল দেয় বলেও জানান ওসি আবু জিহাদ খান।
এ বিষয়ে রয়েল পরিবহনের চেয়ারম্যান সালাউদ্দীন মিয়া বলেন, বিষয়টি মীমাংশা হয়ে গেছে। তবে সড়ক অবরোধের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান জানান, ‘রয়েল পরিবহনের সড়ক অবরাধের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরেও যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়।’

এদিকে, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে রয়েল এক্সপ্রেসের ধাক্কায় নিহত ৬ জনের পরিবারকে নগদ ৪০ হাজার টাকা অর্থ প্রদান করেছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরোজগঞ্জ বাজার কমিটি ও সরোজগঞ্জ ব্লাক-স্পাইডার ক্লাবের সহযোগিতায় সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির অফিসে নিহত পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান করে পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ। এ সময় নিহত ও আহত পরিবারের কোনো ব্যক্তি পরিবহনে চাকরি বা অন্য কোনো চাকরি করতে চাইলে তাঁদের চাকরির জন্য সাহায্য প্রদান করবে বলেও আশ্বাস দেয় পরিবহন মালিক কর্র্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে পরিবহেনর সাথে সংঘর্ষে ক্ষতি হওয়া মোটরসাইকেল, পাখিভ্যান, আলমসাধুর মেরামতের খরচ বহন করবেন পরিবহনের মালিক বলেও জানানো হয়। নগদ অর্থ প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন চুয়াড়াঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরীব রুহানি মাসুম, পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান তাবু তাহের বিশ্বাস, কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মজিবর রহমান, তিতুদহ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি শুকুর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী, সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সদস্য আব্দুল করিম লস্কর, শাহিন মিয়া, পরিবহন মালিকের ছেলে ডা. দিপু মিয়া ও রয়েল পরিবহনের জিএম ফিট্টু মিয়া।
এদিকে, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক ও তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার বিশ্বাস নিহত পরিবারের বাবা,-মা ও স্ত্রীদেরকে যেকোনো ভাতার কার্ডের জন্য ইউপি পরিষদের যোগাযোগ করলে তাঁদেরকে কার্ড করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
অপর দিকে, সরোজগঞ্জ বাজার কমিটি ছাদেমান নেছা বালিকা বিদ্যালয় ও তেঁতুল শেখ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হাজি আব্দুলাহ শেখ জানিয়েছেন, নিহত পরিবারের কোনো ছেলে-মেয়ে যদি লেখাপড়া করে, তাদের লেখাপড়ার সব খরচ বাজার কমিটি বহন করবে। এছাড়াও বাজার কমিটি সভাপতি নিহত পরিবারদেরকে ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন।