নিউজ ডেস্ক:ভারত-বাংলাদেশের যোগাযোগের প্রথম রেল স্টেশনটি প্রায় বন্ধের পথে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করেছে আলমডাঙ্গা স্টেশনে কর্মরত কর্মককর্তারা। গত ৩০ শে জানুয়ারী বুধবার রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করতে সরকারিভাবে স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি এসে পৌঁছায়। এরপর থেকে টিকেট কাউন্টার ছাড়া বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম। এছাড়া স্টেশনের ৮ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৫ জনকে রহস্যজনক কারণে হঠাৎ বদলী করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জনই ইতোমধ্যে আলমডাঙ্গা ত্যাগ করে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। তবে আলমডাঙ্গায় দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মিন্টু মিয়াকে বদলী করা হলেও স্টেশনের হিসাব-নিকাষসহ অন্যন্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য আরও কয়েকদিন আলমডাঙ্গা স্টেশনে থাকতে বলা হলেও সবধরণের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে স্টেশন মাস্টার জানান। তাই গতকাল থেকে রেল স্টেশনের আপ-ডাউনের সকল ট্রেন প্রবেশের সময় পাখা ওঠা নামা বন্ধ হয়ে গেছে। স্টেশনে জ্বলছে না কোন আপ-ডাউনের নির্দেশ বাতি। ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় তদারকিতে থাকছেন না কেউ। শুধুমাত্র স্টেশন মাস্টার অফিসিয়াল কাজে আলমডাঙ্গা স্টেশনে থাকলেও করছেন না স্টেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম। তবে টিকিট কাউন্টারের ২জন বুকিং ক্লার্ক ও ১ জন পোটার তাদের কাজে নিয়োজিত আছেন। হঠাৎ টিকিট বিক্রি ছাড়া সকল কার্যত্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাচ্ছে আলমডাঙ্গা স্টেশনে আসা ট্রেন যাত্রীরা। এছাড়া লোকাল ট্রেন ও ঢাকাগামী ট্রেনের টাইমলাইন, প্রবেশের সময় সূচি থেকে শুরু করে প্রায় সকল তথ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ৩ লাখ সাধারণ মানুষ। ঠিক কী কারণে হঠাৎ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মরত স্টাফদের অন্যত্র বদলী করা হয়েছে, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি স্টেশন মাস্টার।
আলমডাঙ্গায় দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মিন্টু মিয়া জানান, ‘বুধবার রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করতে একটি চিঠি স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু টিকেট মাস্টারের কার্যক্রম চালু থাকবে। ট্রেন আসা যাওয়ার তদারকিতে কেউ থাকবে না। চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য স্টেশনে বদলী করে দেওয়া হয়েছে। এরা হলো- নাজমুল হোসেন (পোড়াদহ), মাহাবুল হক (সিঙ্গিয়া), ইমদাদুল হক (কালিয়াকৈল), সাইফুল ইসলাম (হালসা) এলাকায় বদলী করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম ও দ্বিতলভবন বিশিষ্ট আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি কুমার নদের ওপর লাল ব্রিজ খ্যাত বর্তমান রেলওয়ে ব্রিজটি ১৯০৯ সালে উদ্বোধনের কালিদাসপুর থেকে স্থানান্তরিত হয়। ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হয়। দর্শনা থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে রেলপথটি জগতি স্টেশনে গিয়ে পৌঁছে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশনের মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি মূলত, নীলকর ইংরেজদের একটি কুঠি ছিলো। এখান থেকে তারা এ অঞ্চলের নীল চাষের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতো। ভবনের উপর থাকতো ইংরেজ সাহেব। নীচ তলার কামরাগুলো ছিল তাদের গুপ্ত ঘর বা জেলখানা। এই কামরাগুলো এমনভাবে নির্মিত যে, তার ভেতর আলো, বাতাস এমনকি বাইরের শব্দ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারতো না। যারা নীল চাষ করতে অস্বীকার করত তাদেরকে ধরে এনে কুঠির নীচতলায় আটকিয়ে রাখা হতো এবং প্রয়োজনবোধে তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো। পরবর্তীতে ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাদের ব্যবসা প্রসারে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু এন্ড কোম্পানি (চিনিকল) এবং কুষ্টিয়ার জগতিতে আরো একটি চিনিকল গড়ে তোলে। এ সময়ই মূলত নীলকুঠিটি রেলওয়ে স্টেশনে করে ইংরেজরা।
এ স্টেশনে প্রায় সব ধরনের ট্রেনই থেমে থাকে। যার কারণে আলমডাঙ্গাবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হিসেবে সমাদৃত হয় ট্রেন। উপর মহলের হঠাৎ সিদ্ধান্তে আজ এই ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটি বন্ধের পথে ও ভোগান্তিতে লাখো মানুষ। হঠাৎ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদে নামতে পারেন আলমডাঙ্গাবাসী বলেও জানা যায়।