নিউজ ডেস্ক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারা নিজ নিজ কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সব দাবি বাস্তবায়নে সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
বুধবার দুপুরে মেয়র বুলবুল তার দফতরে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় শ্রমিক নেতারা মেয়রকে এই আল্টিমেটাম দেন। এরপর আন্দোলন সাতদিনের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে নগর ভবনের প্রধান ফটক, গ্যারেজ ও রাসিক নিয়ন্ত্রিত শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার তালা খুলে দেওয়া হয়।
রাসিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজমীর আহমেদ মামুন বলেন, মেয়রের সঙ্গে আলোচনাতেও তারা নিজেদের ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। মেয়র তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু বেতন নিয়ে একটু সমস্যা আছে। সেটাও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। সব দাবি বাস্তবায়নে মেয়রকে ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
আজমীর আহমেদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের চাকরিতে ফেরানোরও আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র। এছাড়া নতুনভাবে কাউকে শোকজ কিংবা চাকরিচ্যুত করা হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। এগুলোও কর্মচারীদের দাবি ছিল। এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামি ১৯ তারিখের পর ফের আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও জানান এই শ্রমিক নেতা।
রাসিকের কর্মচারীরা তাদের ১১ দফা দাবি নিয়ে গেল ১২ জুন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ওই মানববন্ধনের পর গত ১৯ জুন তালা দিয়ে কর্মবিরতি কর্মসূচিও পালন করা হয়েছিল। ওই দিন আন্দোলনরত কর্মচারীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন- দাবি আদায় না হলে ৯ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। ফলে ওই দিন থেকেই তারা সেই কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
আন্দোলনের জেরে তালা ঝোলায় এ ক’দিন দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পারেননি। বুধবার তালা খোলার পর দর্শনার্থী ঢোকানো হচ্ছে চিড়িয়াখানায়। আন্দোলনের সময় নগরীর সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকেও কোনো আবর্জনা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এতে পুরো নগরী পরিণত হয় আবর্জনার ভাগাড়ে। আন্দোলন স্থগিতের পর কর্মচারীরা আবর্জনা সরাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন।
রাসিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল শেখ জানান, গেল বছরের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে সিটি করপোরেশনের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দক্ষ নিয়মিত কর্মচারীদের দৈনিক ৫০০ টাকা এবং অদক্ষ অনিয়মিত কর্মচারীদের প্রতিদিন ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গেল এক বছরেও করপোরেশন কর্মচারীদের দৈনিক মজুরি বাড়ায়নি।
তবে আন্দোলনের পর মেয়র তাদের এই বেতন পুরোপুরি দিতে সম্মত না হলেও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। কর্মচারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- স্থায়ী কর্মচারিদের জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, স্থায়ী কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা, মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিদের পোষ্যদের চাকরি প্রদান এবং মজুরিভিত্তিক কর্মচারিদের চাকরি স্থায়ীকরণ।
রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। কীভাবে তা পূরণ করা যায় সে বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।