স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমাদের অনেক ছেলে-মেয়ে আহত হয়েছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য সরকারের একটা বরাদ্দ আছে সেটা তারা পেয়ে যাবেন। যারা আহত হয়েছেন তাদের বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সঠিক চিকিৎসাটা দেয়া। সেটা নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, আহত তিনজনকে ইতোমধ্যে বিদেশে পাঠানো হয়েছে ডাক্তারদের পরামর্শ মোতাবেক। আরও দুজনের কথা বলা হচ্ছে, এরপর আরও ২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। আমার দিক থেকে এবং আমার মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে যেটা সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি পাচ্ছে, সেটা হচ্ছে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের বহুমুখী সমস্যা আছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নার্সের সংকট রয়েছে। যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। অনেক জায়গায় এম.আর.আই মেশিন, এক্সরে মেশিন নষ্ট। এসব সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমি যখন বিভিন্ন হাসপাতাল ভিজিট করেছি, তখন দেখেছি যারা আহত হয়েছেন তারা দুই চোখই হারিয়েছেন। এই পৃথিবীটাকে তারা আর দেখতে পারবেন না। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য চীন, নেপাল, ফ্রান্স থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসেছে। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল রেডি করে রেখেছে যাদের কর্নিয়া স্থাপন প্রয়োজন হবে তাদের জন্য। ইতোমধ্যে দুইজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেক শ্রেণির পেশার মানুষ আছেন। অনেকে হাত হারিয়েছেন, অনেকে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আহতদের অনেকে নানা ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটা শুধু মন্ত্রণালয়ের বিষয় না। এটা আমাদের পুরো জাতির বিষয়।
করোনাকালীন সময়ে ডাক্তারদের অবদানের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা যে সেবাটা দিয়েছেন, অনেক ডাক্তারও কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আমরা তাদের স্মরণ করি না। কিন্তু তারা অনেক দিয়েছেন জাতির জন্য। বৈষম্যের যে কথা উঠে এসেছে, সেটা নিয়ে আমি বলবো শুধু ডাক্তাররা নয়, নার্সরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের হয়েছে। অনেকে এসে আমাকে বলেছেন ১৭ বছর ধরে চাকরি একই পদে চাকুরি করছেন। এটা তো হওয়া উচিত না। একটা মানুষের যদি কর্মস্পৃহা জাগাতে হয় তাহলে তাকে পথটা দেখিয়ে দিতে হবে।
পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, শিশু বিভাগ, আইসিইউ, ইসিজি রুম, এডাল্ট রিসাসিটেশন রুম, অবজারভেশন রুম, ল্যাবরেটরিসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। এছাড়া পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অং সুই প্রু মারমাসহ অনেকে।