নিউজ ডেস্ক: আজ দর্শনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী জানতে পারেন দর্শনা পরাণপুর বেলে মাঠে ও শান্তিপাড়া এলাকায় পাকবাহিনী ঘাটি করে আছে। এ খবর পাওয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্তের বারাদি গ্রামের অপারে ভারতে অবস্থানরত মক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে রাতের খাবার খেয়ে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার নুর হাকিম, কাসেদ আলী ও আবুল খয়েরের নেতৃত্বে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন মুকিত এর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০জন ভারতীয় মিত্রবাহিনী দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দপুরের নিকট রাবারের নৌকা দিয়ে রাত ১০টায় মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়। এরপর লোকনাথপুরের মধ্যের নলগাড়ীর ডানে ফেলে রাস্তা ধরে কখনো কাঁঠাল বাগনের ভিতর দিয়ে গিয়ে পরাণপুর ও ধাঁপড়ী রাস্তা পার হয়ে বটজল ও গবরা মাঠে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী অবস্থান নেয় বলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর হাকিম জানান। এরপর ঐ মাঠে রাতভর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ব্যাঙ্কার কেটে এ্যাম্বুস নিয়ে রাত ৩টায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় হয়। অপর একটি দলে মুত্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস ছামাদ ও আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে জীবননগর উথলী দিক থেকে এবং মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে আর একটি মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী গেদে সীমান্ত থেকে এসে দর্শনায় অবস্থান নেয়। এরপর মিত্রবাহিনীর কমান্ডার মুকিতের নির্দেশে রাত সাড়ে ৩টা দিকে পরাণপুর বেলে মাঠে শান্তিপাড়া সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত পাক-হানাদার বাহিনী কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের উপর অতর্কিত সেল, এসএমজি ও এসেলারের গুলি ছুড়ে হামলা শুরু হয়। এসময় পাকবাহিনী পাল্টা গুলি, সেল শুরু করে। শুরু হয় ত্রিমুখী তুমুল যুদ্ধ। প্রায় ৩ঘন্টা ধরে থেমে থেমে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি, সেল, মটার গানের গুলি ও ত্রিমুখী বোমা হামলায় পাক-হানাদার বাহিনী বেশিক্ষণ টিকে থাকতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এরপর চুয়াডাঙ্গা শহরের দিকে পালাতে থাকে। এসময় পাক-বাহিনী দুধপাতিলা গ্রামের খোরশেদ আলীর কাঁঠাল বাগান থেকে হঠাৎ সেলিং ও গুলি শুরু করে। এসময় মিত্রবাহিনীর দুইটি ট্যাং এসে পাক-বাহিনী উপর তুমুল আক্রমন ও গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক-বাহিনী আর কোন উপায় না খুজে পালাতে থাকে। পাক-বাহিনী দর্শনা রেললাইন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দিকে পালাতে থাকে। কিছু পাকবাহিনী সড়ক পথধরে পালাতে থাকে একের পর এক মিত্র ও মুক্তি-বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমনে পাক-হানাদার বাহিনী নাস্তানাবুদ হয়ে পালাতে থাকে। এ যুদ্ধে অসংখ্য পাক-সেনা মারা যায়। পাক-হানাদার বাহিনী ভোর ৫টা থেকে দর্শনা ছেড়ে পালাতে থাকে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দর্শনা মুক্ত হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইপিয়ার আবুল কাশেমের ডান পা সেলের আঘাতে উড়ে যায়। এছাড়া মিত্রবাহিনীর ১জন সৈনিক মারা যায়। এরপর ৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র-বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী ক্যাপ্টেন মুকিত এর নেত্রীত্বে দর্শনা কেরু চিনিকলের প্রধান কার্যলয়ের সমানে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে এবং দর্শনা মুক্ত করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত থেকে মিত্র-বাহিনীর মিষ্টার বুফে স্যালুট গ্রহন করেন। এছাড়া ৪ডিসেম্বর দিনভর তুমুল যুদ্ধ করে দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা ও উজিরপুর পাক-হানাদার মুক্ত করে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী।