নিউজ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহিংসতা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে মিয়ানমারের কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে বাংলাদেশি ইথিকাল হ্যাকিং গ্রুপ- সাইবার ৭১। হ্যাক করার পর ‘সাইবার ৭১’ মিয়ানমারকে উদ্দেশ্য করে তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে- ‘তোমরা আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছ, আমরা সাইবারসীমা লঙ্ঘন করলাম’।
মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার হ্যাকারদের সঙ্গে একজোট হয়ে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট (http://www.president-office.gov.mm), তথ্য মন্ত্রণালয় (http://www.moi.gov.mm), কেন্দ্রীয় ব্যাংক (http://www.cbm.gov.mm) এবং প্রভাবশালী কোম্পানি এম কে গ্রুপের অফিসিয়াল (http://www.mkgroup.com.mm/aboutus.php) ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালিয়ে সাইট ডাউন ও হ্যাক করেছে সাইবার-৭১।
হ্যাক করা অন্য ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার রাতে এম কে গ্রুপের ওয়েবসাইট হ্যাক করার পর সাইবার-৭১ সেটি চালু রাখে। সাইটটিতে গেলেই এক রোহিঙ্গা নারীর ছবিসহ কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে:
‘সাইবার-৭১ হ্যাক করেছে। প্রতিদিন মিয়ানমারের মুসলিমরা মিয়ানমারের সরকারের হাতে মারা যাচ্ছে। একইসঙ্গে তাদেরকে সবার থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সরকার শুধু দর্শকের মতো এসব দেখে যাচ্ছে। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়তে থাকা এই ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড শুধু দেখছে তারা…। আর এটি (হ্যাকিং) মিয়ানমার সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট বার্তা।
মুসলিম হত্যা বন্ধ করো, নইলে আমরা প্রতিদিনই তোমাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করব!
মুসলিম হত্যা বন্ধ করো, নইলে আমরা প্রতিদিনই তোমাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করব!
মুসলিম হত্যা বন্ধ করো, নইলে আমরা প্রতিদিনই তোমাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করব!’
বক্তব্যের শেষে #OpMyanmar হ্যাশট্যাগ দিয়ে সাইবার-৭১ এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের অ্যাড্রেস দেয়া হয়েছে।
হ্যাক করার পর সাইবার-৭১ ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছে, তারা লঙ্ঘন করেছিলো আমাদের আকাশ সীমা, আমরা লঙ্ঘন করলাম তাদের সাইবার স্পেসের সীমা। মায়ানমার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রেসিডেন্ট অফিশিয়াল, তথ্য মন্ত্রণালয়, কোম্পানি, মিডিয়ার ওয়েবসাইট আক্রান্ত… খেলা চলছে, চলবে।
বিশেষ বার্তাসহ এম কে গ্রুপের ওয়েবসাইট চালু ও অন্য ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটটি আবার সক্রিয় হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতে মারা গেছে আরও অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।