নিউজ ডেস্ক:ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা আছে ১০টি। এসব ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য ছয় লাখ মণ কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনটি ফিক্সড চিমনির ভাটাতেও পুড়বে তিন লাখ মণ কাঠ। আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে এসব ভাটাগুলো কাঠ মজুত করেছে এবং তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে ইটভাটার মালিকেরা। অথচ ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন রয়েছে। সরেজমিন বেশ কয়েকটি ভাটা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মণ কাঠ মজুত করা রয়েছে। ভাটার চিমনিতে ধুয়া বের হচ্ছে, আর পুড়ছে কাঠ। মহেশপুরের নেপা মোড়ে রয়েছে সোহাগ ব্রিকস্। ব্যারেল চিমনির এ ভাটার চারিদিকে কয়েক শ মণ কাঠ রয়েছে। শ্রমিকরা জ্বালানি হিসেবে এ কাঠ ব্যবহার করছেন। একই এলাকায় রয়েছে মাছুম ব্রিকস্, সেখানেও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। খোসালপুরে রয়েছে ব্যারেল চিমনির ভাই ভাই ব্রিকস্, তারাও পোড়াচ্ছে কাঠ। ব্যারেল চিমনির আরও কয়েকটি ব্রিকস্ রয়েছে। তারাও ব্যাপকহারে কাঠ মজুত করেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নস্তি গ্রামে শাকিল ব্রিকস্, শ্যামকুড়ে এসবিএম ব্রিকস্, গাড়াবাড়িয়া এলাকায় রিপন ব্রিকস্, কুসুমপুর এলাকায় এম এ আর ব্রিকস্ কর্তৃপক্ষও প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। মহেশপুরে তিনটি ফিক্সড চিমনির ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে জুয়েল ভাটায় প্রচুর পরিমাণে কাঠ মজুত দেখা গেছে। একইভাবে যাদবপুরের বাহার ব্রিকস্ ও পদ্মপুকুরের রাফি ব্রিকস্ এ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব ভাটার কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে ভাটা মালিকদের একটি সূত্র। তাঁদের ভাষায় জিকজ্যাক ভাটা ছাড়া অন্য কোনো ভাটার অনুমোদনের সুযোগ নেই। সরকার ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনির কোনো ভাটার অনুমোদন দিচ্ছে না। ভাটা মালিকদের একজন জানান, তাঁরা জিকজ্যাক ভাটা পরিচালনা করেন। এই ভাটায় কয়লা ব্যবহার হয়ে থাকে। জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়ানোর খরচ একটু বেশি হওয়ায় অনেকে করতে চান না। সূত্র জানায়, ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনির ভাটার চেয়ে জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়াতে তাঁদের ইট প্রতি দুই টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এতে তাঁরা ব্যবসায়ীভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কম টাকায় ইট তৈরি করে তাঁরা কম টাকায় বিক্রি করছেন, আর তাঁরা ওই টাকায় বিক্রি করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় এক বছরে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মণ কাঠ পুড়বে। এ হিসেবে ব্যারেল চিমনির ১০ ভাটায় পুড়বে প্রায় ৬ লাখ মন কাঠ। আর তিনটি ফিক্সড চিমনির ভাটায় পুড়বে আরও ৩ লাখ মণ মাঠ। এ হিসাবে এ বছর মহেশপুরে অবৈধ ১৩ ভাটায় প্রায় ৯ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হবে। ভাটায় কাঠ সরবরাহ করেন গোলাম সরোয়ার। তিনি জানান, সারা বছর তাঁরা ভাটা মালিককে কাঠ দিয়ে থাকেন। গাছকাটা ক্ষতিকর জেনেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তাঁরা এই কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে র্যাডো ব্রিকস্-এর মালিক আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, শুধু কাঠ নয়, মাঝে মধ্যে ময়লাও পুড়িয়ে থাকি। এভাবে কাঠ পোড়ানো ঠিক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই করছে, তাই তিনিও করছেন। ফিক্সড চিমনির জুয়েল ভাটার মালিক মশিয়ার রহমান জানান, আগামী বছর তিনি জিকজ্যাক ভাটা করবেন। এ বছর এভাবে চালানো ছাড়া উপায় নেই। বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন সরকার জানান, দ্রুত এ বিষয়ে তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।