স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার একাধিক প্রতিষ্ঠানের তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ওই বালিকা বিদ্যালয়ের সহ-প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ করায় বহুমুখি তদন্তের সম্মুখিন হতে হচ্ছে তাকে। যশোর দুর্নীতি দমন কমিশন, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকেও তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন যাতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত না হয়। শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ খানকে আহবায়ক, সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এবং যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সদস্য করে ইউএনও উসমান গনি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। রহস্যজনক কারণে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। নতুন যোগ হন শৈলকুপার দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা। তারা সম্প্রতি ৭টি বিষয়ের উপর তদন্ত করেন। ৯ জন শিক্ষক তদন্ত কাজে তাদের সহায়তা করেন। গতকাল সোমবার আবারো তদন্ত দল স্কুলে আসার জন্য সময় বেধে দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার কাজের অজুহাতে তারিখ পরিবর্তন করেন। তদন্তের নতুন দিন ধার্য্য হয়েছে ৮ অক্টোবর। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অফিস থেকে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার শুশান্ত কুমার দেব তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকদের সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন। পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক তার দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যে কোন দিন ঢাকায় পাঠানো হতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের ফান্ড তছরুপের ২৪টি খাত উল্লেখ করা হয়। মাত্র এক বছর চাকরীতে যোগদান করে দিলারা স্কুলের বিভিন্ন খাতের ১০ লাখ টাকা তছরুপ করেন। সভাপতির সাক্ষর ছাড়াই জাল ভাউচার তৈরী করেন। স্কুল থেকে অতিরিক্ত বেতনের টাকা নেন। কমিটির অনুমোদন ছাড়া অর্থ ব্যয় আবার কখনো সাধারণ তহবিল ব্যতিত বিদ্যালয়ের নামে কৌশলে নতুন একাউন্ট করে একক চেকে টাকা লেনদেন করছেন। কখনো বা বিল-ভাউচার জালিয়াতি, ফরম পুরন ও রেজিস্ট্রেশনের অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নীতিমালার বাইরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার হ্যান্ডক্যাশ উত্তোলন, নির্ধারিত নোটবই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। ৫০ শতাংশ হারে বেতন উত্তোলন, ছাত্রী ভর্তি, ফরম পুরন, জরিমানাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ফেল করা ছাত্রীদের কাছ থেকে সাবজেক্ট প্রতি ২০০ টাকা আদায় করে পকেটস্থ করেছেন। পরিপত্র মোতাবেক ১০০% সরকারী বেতন পাওয়ার পরও স্কুল থেকে প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৫০০ টাকার বেতন নিচ্ছেন অবৈধ ভাবে। প্রতিদিন তিনি স্কুল কামাই করা ছাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে জরিমানা আদায় করতেন। ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার শুশান্ত কুমার দেব তদন্তের বিষয়ে জানান, তিনি পুরো ঘটনার সারসংক্ষেপ করে রিপোর্ট দিবেন। তিনি বলেন বেসরকারী বিদ্যালয়গুলোতে সভাপতিই ক্ষমতাধর। তাই প্রধান শিক্ষকরা দুর্নীতি, অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতা করলেও দ্রুত কোন শাস্তি পান না। প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে সব মিথ্যা। সম্মানহানী করতেই এ সব কল্প কাহিনী সাজানো হচ্ছে। তদন্তে তিনি নির্দোশ প্রমানিত হবেন বলেও তিনি আশা করেন।