জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার সোনাতনপুার গ্রামে পরিবেশ বান্ধব একটি বিপন্ন প্রজাতির লতা গাছ এখনো পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষন করে চলেছে। গ্রামবাসির মতে লতা গাছটির বয়স হবে আনুমানিক তিনশ বছর। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা থেকে সোনাতনপুর বাজার পর্যন্ত গ্রামীন মেঠো রাস্তার পাশে নবগঙ্গা নদীর ধারে একটি বিরাট বটবৃক্ষ জুড়ে এই লতা গাছের রাজত্ব। সর্পিল ভাবে ওঠা লতাটি যেন আষ্টেপিষ্টে বট গাছটিকে পরম মমতায় আকড়ে ধরে আছে। বিস্ময়কর লতা গাছটির বেড় আট ফুট এবং লম্বা কয়েক’শ ফুট। প্রকান্ড ও মহিরুহ হয়ে লতা গাছটি একটি বৃহৎ বটগাছ জুড়ে আছে। লাতা গাছটি এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে এলাকবাসির কাছে পরিচিত। লতা গাছের গবেষক ঢাকা সরকারী বাংলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিপন্ন উদ্ভিদ প্রাণী সংরক্ষন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী আখতারুজ্জামান চৌধূরী জানান, লাতা গাছটির বাংলা নাম নোয়ালতা। ইংরেজী নাম Hog Creeper। আর বৈজ্ঞানীক নাম Derris Scandens। গাছটি লিগু মিনোসি পরিবার ভুক্ত। অধ্যাপক আখতারুজ্জামান চৌধূরী জানান, ১৯৮১ সালে ভার্সিটিতে পড়ার সময় তিনি বন্ধুদের কাছ থেকে এই লতা গাছের সন্ধান পান। তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে তিনি লতাগাছটি নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। এরপর জাতীয় পর্যায়ে উদ্ভিদ গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি গাছটি নোয়া লতা বলে পরিচয় নিশ্চিত করেন। উদ্ভিদ গবেষক আখতার জানান, দেশীয় উদ্ভিদ হিসেবে বাংলাদেশের কোথাও পুরাতন ও এতো প্রকান্ড লতা গাছ আর নেই।
সোনাতনপুর গ্রামের বংশি বদন ঘোষ তার পূর্বসুরীদের মতো তিনিও লতাগাছটি সংরক্ষন করে আসছেন বলে তিনি জানান। গবেষনায় তিনি উল্লেখ করেছেন ‘নোয়া’ লতাগাছটি বৃহৎ কাষ্টল আরোহী ও চির সবুজ। লতা গাছের পাতা যৌগিক ও জুলাই মাসে ক্ষুদ্রাকুতির সাদাটে ফুল আসে। বীজ ও কান্ডদ্বারা পরিবেশ বান্ধব নোয়া লতার বংশ বিস্তার ঘটে। বালাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার ও দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায় নোয়ালতা গাছ পাওয়া যায়। সাধারণত নদি, খাল ও পতিত জমিতে নোয়া লতা গাছ হয়। ২০১৩ সালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় লতা গাছের গবেষক অধ্যাপক আখতারুজ্জামান চৌধূরী নোয়া লতা গাছটির পরিচয় নিশ্চিত করে সোনাতনপুর গ্রামে ফলক উন্মোচন করেন। হরিণাকুন্ডুর দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, তিনি তার পিতা ও দাদার কাছ থেকে এই লতা গাছ সম্পর্কে শুনেছেন। লতা গাছটি তিনশ বছরের বেশি বয়স হবে। সোনাতনপুর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হুমায়ন কবির জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে লতাগাছটি দেখতে আসেন। তিনি আরো জানান এতো দিন নাম পরিচয়হীন ছিল। এখন গাছটির নাম পাওয়ায় গ্রামবাসি খুশি। ৮/১০ বছর আগে বিস্ময়কর লতা গাছটির সন্ধান পেয়ে ঝিনাইদহের কয়েক জন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান এবং বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন। এরপর লতাগাছটি নিয়ে হরিনাকন্ডুর সোনাতনপুর গ্রামে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে এলাকাবাসির কাছে অচেনা গাছটির গুরুত্ব বেড়ে যায়। পথচারীদের কাছে আজো গাছটি দর্শনীয় স্থান বলে মনে করেন এলাকাবাসী।