কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের তিন উপজেলার যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয়েছিল ৩০ কিলোমিটারের দীর্ঘ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য হওয়া সড়কটি সিলেটের বন্যার কারণ নয় বলে জানিয়েছেন হাওরবাসী। কেননা সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার সময় অনেক জায়গা শুকনো ছিল।
কিশোরগঞ্জ জেলার তিন থানা ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে। সড়কটি ২০ ফুট উঁচু করে করা হয়েছে। বন্যার কারণ যদি এই সড়ক হয়, তাহলে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি যাওয়ার কথা, তাহলে সিলেটের পানি প্রবাহের বাধা হচ্ছে কীভাবে হাওরের এই সড়ক।
সিলেট-সুনামগঞ্জ থেকে এই রাস্তা ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত। সিলেটের পানি প্রথমে সুনামগঞ্জ তারপর হবিগঞ্জ এরপর কিশোরগঞ্জের হাওরে ঢুকে। এছাড়া ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম সড়কে অসংখ্য সেতু ও কালভার্ট রয়েছে, ফলে পানি চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটে না। সড়ক যদি পানি প্রবাহের বাধা হতো, তাহলে অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিটামইনের আশপাশের গ্রাম আগে পানিতে তলিয়ে যেত।
গত আগস্টের পাহাড়ি ঢলে বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। বন্যার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের দাবি ছিল, এ সড়কের কারণেই বন্যার পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায় বন্যা হয়। পরে সরেজমিনে গিয়ে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। দেখা যায়, সড়কটির দুপাশেই সমান পানি। সে-সময়ের কিশোরগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান মিঠামইন জিরো পয়েন্টে ও ইটনার ঢাকী সেতুর কাছে দুটি করে চারটি পানির স্তর মাপার মেশিন বসান। পরে রাস্তার দুই পাশে পানির কোনো চাপ নেই বলে অভিহিত করেন।
ইটনার ইমদাদুল হক বলেন, দেশের সবচেয়ে নিচু জেলা হলো কিশোরগঞ্জ আর সিলেট হলো আমাদের থেকে উঁচু। কিন্তু সিলেটের বন্যার কারণে আমাদের তিন থানাকে একত্রিত করার সড়ককে দায়ী করা হয়। যারা দায়ী করেন তাদের বলব, সরেজমিনে হাওরে এসে যদি দেখেন তাহলে বলতে পারবেন, এই সড়ক বন্যার জন্য দায়ী না। হাওরের অলওয়েদার সড়কটি আমাদের শিক্ষা-চিকিৎসা ও জীবনমান শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ইটনা-মিঠামইন সড়কের দায় আছে কি না, হাওর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যে রাস্তার কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যার কথা বলা হচ্ছে, সড়কটিতে বড় বড় কয়েকটি সেতু আছে পানি সরে যাওয়ার জন্য। সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে যখন বন্যা ছিল, তখন হাওরের অনেক যায়গায় পানিই ছিল না। ইটনা ও মিঠামইনে দুটি বড় নদী আছে, সেদিক দিয়েও পানি সরে যায়।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এটি আমার কাজ না, সড়ক ও জনপদ বলতে পারবে। আমি নতুন এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদের সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। গবেষণার পর জানা যাবে—সিলেট-সুনামগঞ্জ বন্যার জন্য কতটুকু দায়ী ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক।