মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দিনব্যাপী এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। অপর দুই আসামি- রসু খাঁর ভাগ্নে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছকে (৩৮) মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আয়েশা ফ্লোরা, মো. রবিউল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, বেলজীস নাফিসা হক। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. সফি উল্লাহ।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।
আসামি জহিরুল ইসলামের আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করব।
গত ৪ জুলাই রসু খাঁসহ তিনজনের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করার জন্য ৯ জুলাই দিন ধার্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের এ আইন কর্মকর্তা বলেন, শুনানিতে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ তিন আসামির অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছি। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় কমিউনিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এ সময় সে নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ জন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা। ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয় রসু খাঁ। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীনকে হত্যা করে রসু খাঁ। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। পরে তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।
ওই হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ (৪৫) তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। অপর দুইজন হলেন- রসু খাঁর ভাগ্নে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছ (৩৮)।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল মান্নান এ রায় দেন। এরপর মামলার নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খাঁর ছেলে। জহিরুল পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. মোস্তাফার ছেলে। আর ইউনুস একই গ্রামের মৃত মিসির আলীর ছেলে।
হত্যার শিকার পারভীন আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তার বাবার নাম মৃত কাজল খান।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাতে মধ্যে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের মাঠে পারভীন আক্তারকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পারভীনের বাম স্তনে ও দুই পায়ের উরুতে ২০টি সিগারেটের ছেঁকার দাগ ছিল। ওই সময়ে পারভীন অজ্ঞাত হওয়ার কারণে ২১ জুলাই ২০০৯ তৎকালীন সময়ের ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ের এসআই মোশফিকুর রহমান ঘটনার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সে সময় চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি দীর্ঘ ৯ বছর চলমান থাকা অবস্থায় আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পাশাপাশি আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করায় আদালত এই রায় দেন। রসু খাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও আদালতে আরও সাতটি মামলা রয়েছে।