রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য? যে অবস্থানে ভারত

সম্প্রতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে চলা সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে দিল্লির কাছে অবতরণ করেন তিনি। তার পর থেকে তিনি কোন দেশে আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ৭৬ বছর বয়সী এই নেতা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

 

কিন্তু লন্ডন দ্বিধায় থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা অন্য বিকল্প দেখছেন বলে জানা গেছে। এনডিটিভি একটি প্রতিবেদনে সামগ্রিক বিষয়টি তুলে ধরেছে।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে যা বলেন

দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে তার মার আশ্রয় চাওয়ার খবরগুলো ভুল। তিনি বলেন, হাসিনা কোথাও আশ্রয়ের আবেদন করেননি।

তাই যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্নটি এখনো সত্য নয়। তার মা এই মেয়াদের পরে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে কাজ করছেন।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক।

তিনি দিল্লিতে থাকেন। কিন্তু এক্সে তিনি যে পোস্ট করেছেন তাতে বোঝা যায়, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তিনি লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় দেশে প্রাণহানির কারণে আমি ভেঙে পড়েছি। এতটাই ভেঙে পড়েছি যে এই কঠিন সময়ে আমার মাকে দেখতে ও জড়িয়ে ধরতে পারছি না। আমি আমার আঞ্চলিক পরিচালকের ভূমিকার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’

যুক্তরাজ্য যা বলেছে
শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন রাজনীতিবিদ ও কিয়ার স্টারমার সরকারের একজন মন্ত্রী। যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাই তিনি ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই একাধিক প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তিনি যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এনডিটিভিকে বলেছে, ব্রিটিশ অভিবাসন বিধিতে আশ্রয় বা অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ব্যক্তিদের সে দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না। একজন মুখপাত্র আরও বলেন, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের অবশ্যই ‘প্রথমে নিরাপদ দেশে পৌঁছতে হবে’।

স্বরাষ্ট্র দপ্তর আরও বলেছে, ‘যুক্তরাজ্যের এমন লোকদের জন্য সুরক্ষা প্রদানের একটি গর্বিত রেকর্ড রয়েছে যাদের এটি প্রয়োজন। তবে কাউকে আশ্রয় বা অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করার অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। ’

যুক্তরাষ্ট্র একটি বিকল্প?

শেখ হাসিনার ছেলে জয় যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে তার সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তার শাসনামলে ওয়াশিংটন ডিসি ও ঢাকার সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে। আসলে এই বছরের শুরুর দিকে যখন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল, তখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার রাজনৈতিক বিরোধীকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতামত ভাগ করে যে নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না এবং সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা দুঃখিত। ’

যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি এবং কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভিসার রেকর্ডগুলো গোপনীয়।

এর আগে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন, হতাহতের ঘটনা ও আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যেকোনো পরিবর্তনের আহ্বান জানাই। ’

ভারতের অবস্থান
শেখ হাসিনা সোমবার ভারতে অবতরণের পর থেকেই সেখানে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনা খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন চেয়েছিলেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত সরকার সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছে, তারা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা শোকাচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছেন এবং সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে তাকে সুস্থ হওয়ার জন্য সময় দিচ্ছে।

নয়াদিল্লিও এখানে একটি কূটনৈতিক দ্বিধার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা ক্ষমতাচ্যুত নেত্রীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে চায় না। কারণ এতে বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক জটিল করতে পারে। বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে ভারতের কৌশলগত অংশীদার। একই সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ইতিহাসও মাথায় রাখতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই ইন্দিরা গান্ধীর সরকার তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। কারণ বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পুরো পরিবার ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে অস্থিরতার সময় নিহত হন। সুতরাং এই মুহূর্তে তাকে পরিত্যাগ করা সহজ সিদ্ধান্ত হবে না, বিশেষ করে দিল্লির সঙ্গে তার সম্পর্ক বিবেচনা করলে।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular