নিউজ ডেস্ক:
ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ২২ হাজার টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে রেলপথে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে ৫০০ পিপিএম মানমাত্রার এ ডিজেল আমদানি করা হবে বলে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ভারতে উৎপাদিত ডিজেল বাংলাদেশে রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে অনুমোদন দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৬ সালে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে রেলপথে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২ হাজার ২৬৮ টন ডিজেল আমদানি করা হয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি ও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে রেলপথে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর ২ হাজার ২০০ টন এবং ২০১৭ সালে ২ হাজার ২০০টন ডিজেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, চলতি বছর ৭ মার্চ বারতের গৌহাটিতে এনআরএল ও বিপিসির প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিলিগুড়ি-রাধিকাপুর-বিরল-পার্বতীপুর রুটে রেলপথে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে এনআরএলের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ টনের দুটি করে র্যাক আমদানির সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিপিসি কর্তৃক চলতি বছরের ২৩ মার্চ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ডিজেল আমদানির প্রস্তাব পাঠানো হয়। তখন বিপিসিকে জানানো হয় যে, বিপিসি ও এনআরএলের মধ্যে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভার সম্মত ও স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি করে এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে দুটি করে (প্রতিটিতে ২ হাজার ২০০টন) ট্যাংক ওয়াগন র্যাকে এনআরএল থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে। তা ছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এ প্রক্রিয়ায় সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিপিসির চাহিদা অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বর্ধিত সংখ্যক র্যাক আমদানির বিষয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে র্যাক চূড়ান্ত করা হবে। অর্থাৎ ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে পাইপলাইন নির্মাণের আগে পর্যন্ত এনআরএল থেকে অব্যাহতভাবে রেলপথে মাসভিত্তিক ডিজেল আমদানি করা হবে। তাই বিদ্যমান জি টু জি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে প্রিমিয়াম নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতি অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।
এছাড়া, বিপিসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আমদানিযোগ্য ডিজেল রেলপথে ভিন্ন রুটে (শিলিগুড়ি থেকে রাধিকাপুর-বিরল হয়ে পার্বতীপুর) আনা হবে, যার দূরত্ব আগের তুলনায় কম এবং বর্তমান জি টু জি সরবরাহকারীদের ক্ষেত্রে বিপিসিকে ইন্সুরেন্স বাবদ আলাদাভাবে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে এনআরএলের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করে আমদানিতব্য ডিজেলের প্রিমিয়াম পুনঃনির্ধারণ করে সংশোধিত প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বিপিসিকে চিঠি দেওয়া হয়।
এদিকে বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল প্রিমিয়াম নেগোশিয়েশনের জন্য এনআরএলকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ আমন্ত্রণে বলা হয় অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এনআরএল থেকে ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়। একই বৈঠকে পাইপলাইন শুভেচ্ছা সূচক হিসেবে ট্যাংক ওয়াগনের মাধ্যমে আমদানি অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবে সম্মতি জানানো হয়। শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত রেলভাড়া এনআরএল বহন করবে। সে অনুযায়ী বিপিসি ও এনআরএলের মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়েছে উল্লেখ করে এনআরএল পুনরায় প্রিমিয়াম নেগোশিয়েশনে অসম্মতি জানায়।
উল্লেখ্য, এনআরএল থেকে বাংলাদেশে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির বিষয়ে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল বিপিসি ও এনআরএলের মধ্যে ঢাকায় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনআরএল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ প্রথম পার্সেল মিন অব প্লাটস আরব গালফ (এমওপিএজি)+ প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম ৭ ডলার এবং ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং ৮ এপ্রিল তৃতীয় পার্সেল এমওপিএজি+ প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম ৫ দশমিক ৫ ডলার প্রিমিয়ামে বিপিসিতে র্যাক পাঠানো হয়।
এসওপি অনুযায়ী এনআরএল থেকে ৫০০ পিপিএম মানমাত্রার ২২ হাজার টন ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ৫ দশমিক ৫ ডলার করার সুপারিশ করে বিপিসি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে শিলিগুডি থেকে ডিজেল আমদানির একটি প্রস্তাব আগামী ২৩ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে খনিজ ও জ্বালানিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।