লোক-দেখানো ইবাদত অগ্রহণযোগ্য

0
6
লোক-দেখানো ইবাদত কিংবা লৌকিকতা-পূর্ণ আমলকে রিয়া বলে। ইসলামী শরিয়তে রিয়া নিষিদ্ধ ও হারাম। যে ইবাদতে রিয়া বা লোক-দেখানো মনোভাব থাকে, সে ইবাদত অগ্রহণযোগ্য। তার বিনিময়ে কোনো প্রতিদানও পাওয়া যাবে না। আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী বলেন, যে ব্যক্তি সম্পদ ও সুনামের জন্য জিহাদ করে, সে কী প্রতিদান পাবে? তিনি বলেন, সে কিছুই পাবে না। লোকটি একই প্রশ্ন তিনবার করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেকবার বললেন, সে কিছুই পাবে না। এরপর তিনি বললেন, যে আমল কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয়, এমন খাঁটি আমল ছাড়া আল্লাহ তায়ালা আর কিছুই কবুল করেন না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৪৪)

লোক-দেখানো মনোবৃত্তিসম্পন্ন ইবাদতের কারণে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজিদের জন্য, যারা তাদের নামাজে গাফলতি করে, আর (নামাজ পড়লেও) লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে তা করে।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৬)

লোক-দেখানো মনোবৃত্তিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘শিরক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল, যে ব্যক্তি লোক-দেখানোর জন্য রোজা রাখল এবং যে ব্যক্তি লোক-দেখানোর জন্য সদকা করল, সে অবশ্যই শিরক করল।’ (হেদায়াতুর রোয়াত, হাদিস : ৫২৬০)

অন্য হাদিসে আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘একদিন আমরা (সাহাবায়ে কেরাম) দাজ্জালের ফেতনা সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এসময় আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের কাছে এসে বলেন, শোন! আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে বলব, যা তোমাদের জন্য দাজ্জাল থেকেও আশঙ্কাজনক? আমরা বললাম, বলে দিন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, গোপন শিরক। (তা হলো) কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে তার নামাজ এ কারণে দীর্ঘ করে যে, লোকেরা তার নামাজ দেখছে।’ (হেদায়াতুর রোয়াত, হাদিস : ৫২৬২)

আল্লাহ তাআলা বান্দার আমলের সুরত-আকৃতি কিংবা সংখ্যাধিক্য দেখেন না। দেখেন মানুষের মনের অবস্থা। যদি ইবাদত মন থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তাহলে তা কবুল করেন। আর যদি এতে লোক-দেখানো মনোবৃত্তি থাকে, তাহলে তা কবুল করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাহ্যিক চালচলন ও বিত্তবৈভব দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩১১)

এই হাদিসে অন্তর দেখার অর্থ হলো, অন্তরের নিয়ত ও নেক আমলের উদ্দেশ্য দেখা। যদি আমলের উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা সে আমল কবুল করবেন এবং এর প্রতিদান দেবেন। আর যদি অন্তরের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া ভিন্ন কিছু হয়, তাহলে সে আমল আল্লাহ কবুলও করবেন না এবং এর প্রতিদানও দেবেন না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের লোক-দেখানো মনোভাব বর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ

রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।