নিউজ ডেস্ক:
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রি ফেল্টম্যান, সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন এবং বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জেনেভা ভিত্তিক মানবাধিকার কাউন্সিলের মিয়ানমার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার প্রফেসর ইয়াং হী লী’র সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: দীপু মনি এমপি।
সোমবার এসব বৈঠকে মিয়ানমার প্রশ্নে ডা: দীপু মনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিয়ানমারকে বুঝাতে হবে যে জোরপূর্বক ব্যাস্তুচ্যুত রাখাইন প্রদেশের প্রায় এক মিলিয়ন নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে তাদের নিজভ‚মিতে অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।
এর কোন বিকল্প নেই”।
বৈঠকসমূহে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে এই উদ্বাস্তু সঙ্কটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে ডা: দীপু মনি আরও বলেন, “জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক মহলকে এ সমস্যা সমাধানে জোর ভূমিকা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্যের বিপুলসংখ্যক এই বাস্তুচ্যুত মানুষকে আর আশাহত করতে পারে না”।
বৈঠকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রি ফেল্টম্যান তার সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ডা: দীপু মনি এমপিকে অবহিত করেন। তার সফরকালে এ সঙ্কটের সমাধানে মিয়ানমারের করণীয় বিষয়ে জাতিসংঘের বিবেচ্য দিকগুলো নিয়ে তিনি মিয়ানমার নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করেন মর্মেও জানান।
একইদিন সকালে সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেনের সাথে বৈঠক করেন ডা: দীপু মনি এমপি। প্যাটেন গতমাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে মিয়ানমার সঙ্কটের সমাধানে যে অ্যাকশান প্লানের কথা তুলে ধরা হয়েছে তার প্রশংসা করেন।
প্রমীলা প্যাটেন বলেন, সম্পদ ও সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বাংলাদেশ যেভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের স্বাগত জানিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এই অবদান বিশ্ব আজীবন স্মরণ রাখবে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের ভিকটিম সাপোর্ট ফান্ডে এক লক্ষ ডলার প্রদান করায় তিনি বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
আলাপকালে প্যাটেন জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন। প্যাটেন আরও জানান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের বিশেষ করে নারীদের উপর যৌন নির্যাতন বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি এসকল নির্যাতিত নারীদের সাথে সরাসরি কথা বলবেন।
কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্প পরিদর্শনকালে নারীর প্রতি সহিংস যৌন নির্যাতনের যে ভয়াবহ বাস্তব চিত্র ডা: দীপু মনি দেখেছেন তা তিনি প্যাটেনের সামনে তুলে ধরেন। ডা: দীপু মনি এমপি বলেন, যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।
অপরাহ্নে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আসেন মানবাধিকার কাউন্সিলের মিয়ানমার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার প্রফেসর ইয়াং হী লী। তিনি ডা: দীপু মনি এমপি’কে জানান যে, তার পরবর্তী রিপোর্টে তিনি চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি আরও বিস্তারিত ও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরবেন।
বৈঠককালে তাদেরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ডা: দীপু মনি। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ এসব বৈঠকে ডা: দীপু মনির সাথে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও স্থায়ী মিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
একই দিন বেলা চার টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী সম্পর্কিত কমিটিতে ফিলিস্তিন পরিস্থিতির উপর আয়োজিত এক সভায় বক্তৃতা করেন ডা: দীপু মনি।
এ সভায় ফিলিস্তিনীর সার্বভৌমত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোভাবের কথা উল্লেখ করে ডা: দীপু মনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ সর্বদাই পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে দুই রাষ্ট্র সমাধান কাঠামোর (Two state solution framework) ভিত্তিতে একটি স্বাধীন, টেকসই, সুসংহত ও সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারসহ ফিলিস্তিনী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে”।