নিউজ ডেস্ক:
২০১৬ সালের শেষের দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালানোর সময় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের ওপর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি স্বতন্ত্র ধারার আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরুর জন্য মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই সংগঠনটি। দায়ী সেনা ও পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রাখাইনের মংডু জেলার অন্তত নয়টি গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, আক্রমণাত্মকভাবে দেহ তল্লাশি ও যৌন নিপীড়ন চালান।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ডের পোশাকধারীরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়েছেন। বন্দুকের নল তাক করে নারীদের জিম্মি ও ধর্ষণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৮ জন নারী ও ১০ জন পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষকরা এ সাক্ষাতকার নিয়েছেন। সাক্ষাতকারদাতাদের মধ্যে ১৭ জন নারী ও পুরুষ যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের স্ত্রী, বোন কিংবা মেয়েরা এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে দেখেছেন। এদিকে ১৮ জন নারীর মধ্যে ১১ জনই যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর প্রাণে বেঁচে গেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অবশ্য এরইমধ্যে জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে।
এর আগেও মিয়ানমারে অব্যাহত রোহিঙ্গা নির্যাতন ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে মিয়ানমার সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।