1. [email protected] : amzad khan : amzad khan
  2. [email protected] : NilKontho : Anis Khan
  3. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  4. [email protected] : Nilkontho : rahul raj
  5. [email protected] : NilKontho-news :
  6. [email protected] : M D samad : M D samad
  7. [email protected] : NilKontho : shamim islam
  8. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  9. [email protected] : user 2024 : user 2024
  10. [email protected] : Hossin vi : Hossin vi
রঙিন চর্যাপদের খোঁজে ! | Nilkontho
৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | রবিবার | ২১শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হোম জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি জেলার খবর আন্তর্জাতিক আইন ও অপরাধ খেলাধুলা বিনোদন স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি লাইফষ্টাইল জানা অজানা শিক্ষা ইসলাম
শিরোনাম :
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে: মিলন এখনো সঠিক পথে আসেনি দেশের গণমাধ্যমগুলো: হাসান হাফিজ শ্রীবরদীতে বালুঘাট ফুটন্ত স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে শীত বস্ত্র বিতরণ জামানতের শতকোটি টাকা নিয়ে শঙ্কায় ৩৫ হাজার গ্রাহক পরবর্তী নির্বাচনে দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা রয়েছে: ড. ইউনুস প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যাচ্ছেন ৫০ বিচারক ফুলের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বেলজিয়াম প্রবাসী যুবদল নেতা মোস্তফা মোহাম্মদ বাবু পঞ্চগড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে শীত আনন্দ এবং শিক্ষা উপকরণ উপহার উৎসব পাঠ্যবইয়ে যেভাবে উঠে এলো শেখ হাসিনার পতন জকসু নীতিমালা অনুমোদন সিরাজদিখানে আহবান সমাজকল্যাণ সংগঠন এর পক্ষ থেকে ব্যাপী বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কচুয়ায় আল বারাকা আইডিয়াল একাডেমীতে ওরিয়েন্টেশন সভা অনুষ্ঠিত পুনর্নির্বাচিত নেতৃত্বে কুবি ছাত্রশিবির ইবিতে স্বতন্ত্র ভর্তির দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ বিয়ে করছেন তাহসান, পাত্রী কে? শীতে কোন তিন রোগে কাবু শিশুরা? ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে অবৈধ বিদেশি চার-পাঁচ লাখ, ব্যবস্থা নেবে সরকার ইবিতে নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার অভিযোগে এক যুবক আটক শেরপুরে হতদরিদ্রদের জন্য ১০টাকায় মিলছে কম্বল 

রঙিন চর্যাপদের খোঁজে !

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

র্যাপদ যেন শতবর্ষের একটি শতদল। ভারতবর্ষ ও তিব্বতের সংস্কৃতির ঐক্যের ইতিহাসে এই চর্যাপদ একটি রেখা নয়, বর্ষার ভরা নদী। চর্যাপদের তালপাতার পুথিতে লেখা রয়েছে পূর্ব-ভারতের হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা, গানের ছলে। এটি মূলত তান্ত্রিক-বৌদ্ধমতের গানের সংকলন। আবিষ্কারের পর চর্যাপদ হয়ে ওঠে বাংলাসহ পূর্ব-ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের পণ্ডিতদের আরাধ্য ও সাধনগ্রন্থ। শত বছরে চর্যাপদ-চর্চা কেবল বাংলা বা এর ভগিনীপ্রতিম ভাষায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। চর্যার তিব্বতি রূপ যেমন আবিষ্কৃত হয়েছে, তেমনি ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে প্রায় অর্ধডজন; বাংলা-অসমিয়া-ওড়িয়া-হিন্দি-মৈথিলি প্রভৃতি ভাষার পাঠ তো রয়েছেই। চর্যাকারদের ছবি পাওয়া গিয়েছে লাদাখ থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত। যে ধর্মমত চর্যাপদ বহন করে তা এই সময়ের নেপালেও বিক্ষিপ্ত ও বিরল। চর্যার ভূগোল তাই হিমালয়গলা নদীগুলোর মতো এশিয়ার বুকজুড়ে বিস্তৃত হয়ে তান্ত্রিক-বৌদ্ধমত বহন করে চলছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই সাংস্কৃতিক সম্পদ নিয়ে বিতর্ক ও দ্বিমতের শেষ নেই। আপাত নিরীহ এ গ্রন্থটির সঙ্গে এই ভূভাগের ভাষাসমূহের অধিকাংশ প্রধান আধুনিক ভাষার ঐতিহাসিক বিবর্তন যুক্ত থাকায়, প্রায় সব ভাষাভাষী পণ্ডিত জাতীয় গৌরবের ভিত্তি থেকে চর্যাপদকে বিচ্ছিন্ন করতে চাননি। আবিষ্কারক হিসেবে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী জানালেন এর ভাষা বাংলা, রাহুল সাংকৃত্যায়ন জানালেন এর ভাষা হিন্দি; এই রকম বিভিন্ন ভাষার গবেষকবৃন্দ তাঁদের ভাষার সঙ্গে চর্যাপদের সম্পর্ক অন্বেষণ করলেন এবং যাঁর যাঁর মাতৃভাষার নমুনা হিসেবে দাবি করলেন। বলা যায়, এই ঘটনাগুলো আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের জন্য শুভ হলেও নির্মোহ জ্ঞানকাণ্ডের জন্য হয়েছে ভয়ানক। এককথায় বলা যায়, আত্মস্বীকৃত-আত্মীকৃত ইতিহাস ও নৈরাজ্যমূলক সাহিত্যের ইতিহাসের কবলে পড়েছে চর্যাপদ। কেবল ভাষা বা শব্দের ব্যুৎপত্তি নয়—এর নামকরণ, রচনাকাল, লিপি, ধর্মমত, নবচর্যাপদ নিয়ে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। বিভিন্ন ভারতীয় সাহিত্য ও ভাষার পণ্ডিতেরা অবিরত গবেষণামূলক প্রকাশনার মাধ্যমে চর্যাপদের স্বপক্ষের ব্যাখ্যা জানিয়েছেন। এই বহু ভাষান্তর বহু-পাঠান্তর তৈরি করেছে সহজে। পাঠান্তর মানে মতান্তর। চর্যাপদের রহস্যের ভাঁজ খোলার বদলে তা হয়ে ওঠে অস্পষ্ট-দুর্বোধ্য কিন্তু স্তাবকতায় ভারী।

বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নরওয়ে, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্যাপদকে কেন্দ্র করে গবেষণা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সাহিত্যের বিভাগগুলোর অনেকেই চর্যাপদ সম্পর্কিত ধারণাকে সরল ও ‘ছাত্রপাঠ্য’ সংস্করণে দেখতে অভ্যস্ত। তাই নিজের ভাষা বা ঐতিহ্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে এমন যুক্তিকে পবিত্রতার বিন্দু থেকে ‘বিচ্যুতি’ মনে হতে পারে তাঁদের কাছে। কিন্তু ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের পদ্ধতিতে চর্যাপদের বিশ্লেষণ এই বই সম্পর্কে আমাদের আরও সূক্ষ্ম সত্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে বলে মনে হয়। জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চায় চর্যাপদ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বলে এর নির্মোহ পাঠ তৈরি হওয়া কঠিন। পূর্বাঞ্চলের নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর তুলনামূলক আলোচনা করতে সক্ষম ব্যক্তির কাছে চর্যাপদ ভিন্নভাবে ধরা দেবে।

২.

১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার গ্রন্থাগারে তালপাতায় লেখা চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। পুথিটি আসলে মুনিদত্তের টীকার পুথি। চর্যাগানগুলো সঙ্গে রয়েছে। তালপাতার এই পুথিটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে নিয়ে আসেননি। তিনি এনেছিলেন প্রতিলিপি। এই প্রতিলিপিটিই কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংরক্ষিত আছে, যার ক্যাটালগ নম্বর ৮০৬৩। তাহলে ‘আদি ও আসল’ পুথির কী খবর তা অজ্ঞাতই রয়েছে গেছে। সুকুমার সেন একজন জাপানি গবেষকের কাছে মূল পুথির ফটোকপি দেখেছিলেন ১৯৬৬ সালে। এরপর ১৯৭৮ সালে নীলরতন সেন পুরো চর্যাপদের ফটোমুদ্রণ (ফ্যাক্সিমিলি) সংস্করণ প্রকাশ করেন। সিমলা থেকে বড় আকারে পুথির আলোচিত্রসহ ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ হয় নীলরতন সেনের সম্পাদনায়। কিন্তু সে সংস্করণ ছিল স্পষ্ট, যদিও সাদাকালো। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের যে পুথিটি দেখেছিলেন সেটি নাগরি হরফে লেখা ছিল। তাঁর মতে, এর ভাষা বাংলা। এর লিপি দেখে পণ্ডিতদের অনুমান, পুথিটি লেখার সর্বোচ্চ সীমা বারো শতক থেকে ষোড়শ শতক পর্যন্ত। অনেকে আবার মনে করেন, পুথিটি শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পুথি থেকেও অর্বাচীন। নীলরতন সেন পুথি সম্পর্কে জানান এর লিপি বাংলা। যদিও অনেক পণ্ডিত মনে করেন এই লিপি কুটিল লিপি। তালপাতার পুথিটির উভয় পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে। এর আয়তন পৌনে তেরো ইঞ্চি পার্শ্বে কিন্তু প্রায় দুই ইঞ্চি। প্রতি পৃষ্ঠাতেই রয়েছে পাঁচটি করে লাইন। কেবল একটি পাতায় ছয়টি লাইন রয়েছে। পুথিতে ১ থেকে ৬৯ পর্যন্ত পাতা পাওয়া গেলেও কয়েক জায়গায় পাঁচটি পৃষ্ঠা পাওয়া যায়নি। নীলরতন সেন ছাড়াও হাসনা মওদুদ ‘চর্যা’ শিরোনামের কয়েকটি পুথি ছাপিয়েছেন তাঁর বইয়ে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। দেশি-বিদেশি অনেক পণ্ডিত এর নতুন নতুন পাঠান্তর তৈরি করেছেন। তবে যা-ই করুক, ভিত্তি কিন্তু অনুলিপিকৃত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পুথি ও তাঁর পাঠ।

৩.

পরবর্তী সময়ে অনেকেই নেপাল গিয়ে চর্যার খোঁজ করেছেন। কেউ হদিস দিতে পারেনি। নেপালের প্রত্নসম্পদের ওপর পশ্চিমা পণ্ডিত ও বণিকদের লোভী দৃষ্টি কয়েক শত বছর ধরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে চর্যা নিজ চোখে দেখা আমার মতো সাহিত্যের ছাত্রের কাছে আরাধনার মতোই—এমন আকাঙ্ক্ষা বুকে পুষে আমি ২০১৪ সালে নেপাল যাই ত্রিভুন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষাবিজ্ঞান সম্মেলনে প্রবন্ধ পড়তে। সেখানে শতাধিক দেশি-বিদেশি ভাষাবিজ্ঞানী ছাড়াও অনেক ফোকলোর বিশেষজ্ঞ ছিলেন। কেউই চর্যাপদের খবর দিতে পারেননি। একজন জানালেন, মৈথিলি এক পণ্ডিতের কথা, যিনি তান্ত্রিক-বৌদ্ধিক টেক্সট নিয়ে কাজ করেছিলেন। দুর্ভাগ্য যে তাঁর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। এরপর কাঠমান্ডুর বিভিন্ন দরবার—বিশেষত পাতান দরবার, ভক্তপুর দরবার ও সিংহদরবারে খোঁজ করি, চর্যা ও তান্ত্রিক-বৌদ্ধমতবিষয়ক কোনো সূত্র যদি পাওয়া যায়। নেপাল ও তিব্বতের ঐতিহ্যবাদী চিত্ররীতি থংকা বা তংকা, যা অনেকটা আমাদের পটচিত্রের মতো, সেই তংকায় মহাসিদ্ধাদের কিছু ছবি পাওয়া গেল। কিন্তু সেখানে কাহ্নপা, সরহপা, শবরপার স্পষ্ট একক কোনো চিত্র পাওয়া গেল না। তিব্বতি প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে এমন দোকানে পেয়ে গেলাম বজ্র ও ঘণ্টা। এই বজ্র বজ্রযান সিদ্ধাদের পূজার মূল উপকরণ ও প্রতীক।

এবার পাওয়া গেল চর্যাপদের রঙিন প্রতিলিপি। নেপাল থেকে বাংলা কবিতার প্রথম নমুনার ছবি সংগ্রহ করেছেন লেখক

এবার ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে আবার নেপাল গেলাম চর্যার খোঁজে। কোথায় পাওয়া যেতে পারে—এ বিষয়ে আমার কিছু অনুমান ছিল। রয়াল দরবার লাইব্রেরি বলতে এখন আর কিছু নেই। জেনেছি, নেপালের সরকারি অনেক অধিদপ্তর এর সম্পদগুলো বণ্টন করে নিয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল, ভক্তপুর দরবার নয়, সিংহদরবারের গ্রন্থাগারেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী পুথিটি দেখেছিলেন। কারণ, ভক্তপুর দরবারে একটি মিউজিয়াম ছিল, সেটি আমি দেখেছিলাম ২০১৪ সালে, সেখানে চর্যাপদ পাইনি। তবে তান্ত্রিক বৌদ্ধমূর্তির বিশাল সংগ্রহ ছিল। পুথিও ছিল সংস্কৃত ও তিব্বতি ভাষার। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ লাইব্রেরির ‘এনডেনজারড ডকুমেন্ট’ ডিজিটাইজেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে একটি পুথি দেখলাম ‘চর্যাগীতা’ নামে। এই গীতা যে গীত সন্দেহ নেই। নেপালের অনেককে এর মুদ্রিত অনুলিপি পড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলাম, যাঁদের পড়তে পারার কথা। কেউই পারলেন না। সে পুথি এখনো আমার কাছে অধরা।

বাঙালিদের নেপালে গিয়ে চর্যাপদ দেখতে না পারার প্রধান কারণ, বাঙালিদের মতো নেপালিদের এ বিষয়ে ঔৎসুক্য নেই। দ্বিতীয়ত, জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে তাঁরা চর্যাপদকে জড়াননি। চর্যার পুথির মতো সহসÊ নয়, লাখো পুথি কাঠমান্ডু ভ্যালিতেই রয়েছে। তৃতীয় কারণ, আমরা যেভাবে চর্যাপদকে চিনি তার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে বিশ শতকের প্রথমপাদের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের অতি-উৎসাহ ও ব্যক্তিমত-নির্ভর গবেষণা। আমরা যেভাবে চর্যাপদকে চিনি, নেপালিরা সেভাবে নাও চিনতে পারে—এই সূত্রই আমাকে সহায়তা করেছে চর্যাপদের কাছে পৌঁছাতে। বর্তমানে চাচাগান ও চাচানৃত্য বলতে নেওয়ার জাতির মধ্যে একটি সাধনশিল্প প্রচলিত রয়েছে। এই সাধনা গোপনে করা হয়। ফলে সর্বসাধারণ এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর রাখেন না। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে পুথি দেখেছিলেন, সেটি দেখলাম এই জানুয়ারির ৫ তারিখ সকালে। সাদা কাপড়ে জড়ানো। কাঠের একটি পাটা (প্রচ্ছদ) রয়েছে। কাঠের পাটাটির ছবি তুলতে পারিনি। মাত্র চারটি ফোলিও বা উভয় পৃষ্ঠায় সাতটি পাতা রয়েছে। আয়তন তেত্রিশ ও সাড়ে চার সেন্টিমিটার। দেখে বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক—হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান বহনকারী সম্পদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আনন্দিত এই ভেবে, প্রথমবারের মতো রঙিন চর্যাপদের পাতা দেখানো সম্ভব হবে। দুঃখও থাকল, বাকি পাতাগুলো জন্য। হয়তো আগেই বেহাত হয়েছে বা ভূকম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার বিশ্বাস, ভিন্ননামে কোথাও না কোথাও রয়েছে এই বাকি পাতাগুলো।

আমার দেখা পুথিটির রং গাঢ় হলুদ, বাদামির কাছাকাছি। প্রতিটি পাতায় লাইন রয়েছে পাঁচটি। কালো কালির প্রায় প্রতিটি অক্ষর স্পষ্ট। মুনিদত্তের টীকার পুথি হওয়ায় এর মধ্যে গানের চেয়ে টীকার অংশ বেশি। সাধারণ পাঠক সহজে টীকা ও গান আলাদা করতে পারবে না।সেদিন উচ্চ রেজল্যুশনে ছবিসংগ্রহ সম্ভব হলো। ডানে ও বামে নম্বরযুক্ত রয়েছে। তালপাতা ওপরে ডানে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। মাঝের দড়ি দিয়ে বাঁধার জন্য যে ছিদ্র, সেটি বড় হয়ে বাম পাশের একটি অক্ষর অস্পষ্ট করে তুলেছে। সংগ্রাহকদের কাছে এই পুথির ভাষা সংস্কৃত, লিপি নেওয়ারি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছিলেন, এর ভাষা প্রাচীন বাংলা। নেওয়ার ও বাংলা ভাষার মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কিন্তু সে সম্পর্ক এখন পর্যন্ত কেউ যাচাই করেনি। আমার মনে হয়, এর ভাষা ও লিপি উভয়ই ‘প্রাচীন বাংলা’ ও নেওয়ারের মিশ্রণ। আমাদের দেশে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে গভীর চর্চা থাকলেও নেই নেওয়ারি বৌদ্ধ মতবাদ ও নেওয়ারি লিপি সম্পর্কে বিশদ ধারণা, এমনকি রঞ্জনা লিপি নিয়ে আমাদের চর্চা নেই। চর্যাপদের লিপি নেওয়ার না ‘প্রাচীন বাংলা’ তা ইতিহাসের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যাকে সমাধানে পৌঁছাতে সহায়তা করবে—মুসলমান আগমনের ফলে এ দেশের বৌদ্ধরা এ দেশ থেকে উঁচুভূমিতে চলে গিয়েছিল এবং সঙ্গে চর্যাপদের পুথি বাংলা অঞ্চল থেকে নিয়ে গিয়েছিল কি না; নাকি চর্যাপদ নেপাল ও বাংলাদেশ সন্নিহিত অঞ্চলের যৌথ সংস্কৃতির ফল।

নেপালের সরকারি সংগ্রহশালায় কিছু পুথি রয়েছে, যেগুলো তালপাতায় নয়, তুলোট কাগজে লিখিত। অতি আশার কথা যে নেপালে এখনো শতাধিক বাংলা পুথি রয়েছে। কিছু পুথির লিপি বাংলা কিন্তু ভাষা সংস্কৃত বা নেওয়ারি। কিছু পুথির ভাষা বাংলা কিন্তু লিপি নাগরি বা নেওয়ারি। এর মধ্যে রামায়ণ, মহাভারত, সংগীতগ্রন্থ, হিন্দুতন্ত্র, তন্ত্রগ্রন্থ এবং তুলোট কাগজে লিখিত অর্বাচীন চর্যাপদ রয়েছে। সেগুলো ভাষাবিজ্ঞান, লিপিবিদ্যা ও ইতিহাসের বিভিন্ন শর্ত দিয়ে যাচাই করে নতুন ভাষ্য তৈরির সুযোগ রয়েছে। এই ভাষা চর্যাপদ সম্পর্কিত একাডেমিক মিথগুলোর বিনির্মাণে সহায়তা করবে।

 Save as PDF

এই বিভাগের আরো খবর

নামাযের সময়

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • Invalid Adjusted Time
  • Invalid Adjusted Time
  • Invalid Adjusted Time
  • Invalid Adjusted Time
  • Invalid Adjusted Time
  • Invalid Adjusted Time

বিগত মাসের খবরগুলি

শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১