মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড এবং তার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে তার ভাই তাওফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন। তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ছমির উদ্দীনের বড় ছেলে।
তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও ২০১৪ সালে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান, এএসপি আব্দুল জলিল, ওসি বাবুল আক্তার, সদর থানার ওসি রিয়াজুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমিন মজুমদার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ হোসেন, র্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন আশরাফ হোসেনসহ পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যসহ ১৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামকে।
মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা তৎকালীন এসপি নাহিদুল ইসলামের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত ১১টার দিকে বামনপাড়া শ্মশানঘাটে তারিকের ওপর অমানসিক নির্যাতন ও বুক, পেটে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর বিষয়টি বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ফাঁসির আদেশের পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আসামিরা বুনো উল্লাস সহকারে জামায়াত নিধনের স্লোগান দিয়ে শহরে মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের দোকান মেসার্স তাওহিদ অটোতে হামলা চালানো হয়। দোকানের শার্টার ভেঙে নগদ টাকা, মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দোকানের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আসামিরা দোকানের দোতলায় অবস্থিত তারিকের বাড়িতেও হামলা চালায়। আসামিরা কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে বাড়ির সামনে।
এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী তাওফিকুল ইসলাম জানান, অসহনীয় নির্যাতনের শিকার পরিবারের লোকজন দীর্ঘ সময় অসহায় সময় পার করেছেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। আসামিদের যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়, তাহলে আমাদের মতো আর কোনো পরিবারের সন্তান হারাতে হবে না। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মারুফ আহম্মেদ বিজন জানান, বিরোধী মত দমনের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে তারেককে হত্যা করেছিল।