নিউজ ডেস্ক:
বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা রয়েছে। বিষয়টি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য পদ্মা সেতুর কল্যাণে।
দৃশ্যমান অগ্রগতিতে এগিয়ে চলছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ এই প্রকল্পের কাজ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া ১০টি প্রকল্পে গতবারের তুলনায় বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখতে এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তারা বলছেন, মেগা প্রকল্প ঘিরে, মেগা উন্নয়নের হাতছানি থাকবে এবারো।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পথে। এর থেকে প্রমাণ মিলে দেশের উন্নয়নে সরকারের স্বদিচ্ছা রয়েছে, সরকারের সক্ষমতা রয়েছে। সরকারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে বড় বড় প্রকল্প নিতে পারত না। প্রকল্প না নিতে পারলে দেশের উন্নয়ন হতো না।
তিনি বলেন, আগামী বছরেও মেগা নির্মাণযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে। আমাদের স্বপ্নের সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরের মতো দুটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চল হবে সিঙ্গাপুর। পায়রা বন্দর হবে। সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রাজস্ব বাড়বে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কর্মসংস্থানের জন্য আর বিদেশ যেতে হবে না। ট্যাক্স না দিলে কলকারখানা বাড়বে না, উন্নয়ন হবে না। কলকারখানার মালিক সরকার নয়, জনগণ ।
বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবারো মেগা প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য ৩২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি মোট উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২১ দশমিক ২১ শতাংশ। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বাড়াতে অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বরাদ্দের এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে বাজেট উপস্থাপনার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন।
দেখা গেছে, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন সরকারের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর রেল সংযোগ’ প্রকল্পের জন্য। নতুন বাজেটে ৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ প্রকল্পে। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পদ্মা বহুমূখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য। এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এরপর যথাক্রমে ঢাকার যানজট নিরসনে চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা এবং মাতারবাড়ি (২×৬০০) মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল্ড ফায়ার পাওয়ার প্রজেক্টের জন্য দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া দোহাজারি থেকে রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত রেল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা এবং রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মাত্র ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেখা গেছে, শুধুমাত্র রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়া আগামী বাজেটে সকল প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে এখনো ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারেনি সরকার। তাই বাজেটে এ প্রকল্পে বরাদ্দ কম রাখা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিভিন্ন জটিলতা কেটে গেলে, সংশোধিত বাজেটে হলেও এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে ব্যাপক আকারে কাজ শুরু করা হবে। এখনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, চলতি মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বড় কয়েকটি প্রকল্পের অগ্রগতি দৃশ্যমান করতে চায় সরকার। ফলে এডিপির বড় অংশ চলে যাচ্ছে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে-এসব প্রকল্প নিয়ে সরকার যে শুধু এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে তা নয়। এসব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে, দৃশ্যমান। সুতরাং আমরা আশা করছি নির্দিষ্ট সময়েই এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরেও দুয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া দেশের সক্ষমতাকেই নির্দেশ করে।
তবে সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাত্ত্বিকভাবে বড় বাজেটে কোনো সমস্যা নেই, সেটি বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটাই প্রশ্ন। এর আগে যে বাজেট ছিল বিভিন্ন কারণে সেটিতে টান পড়েছে। সেহেতু এখনকার বাজেট কতটা বাস্তবায়ন হবে সেটি দেখার বিষয় ।
মেগা প্রকল্পের বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পে চাহিদা থাকলে বরাদ্দ তো দিতেই হবে। তবে আমাদের প্রকল্পগুলোতে অনেক সময় ফিজিক্যাল সমস্যার থেকে আর্থিকভাবে সমস্যা বেশি হয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে, কাজের আগেই টাকার অনেক অংশ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর তাই আমার মতে সরকারের উচিত বিভিন্ন প্রকল্প বেসরকারি খাতে দিয়ে দেওয়া যাতে কাজের মান ভালো থাকে এবং অর্থের কোনো ঘাটতি না হয়। তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি সহনীয় হয়, যদি টাকাটা যথাযথ কাজে লাগানো যায়। যদি দুর্নীতি ও অপচয় না হয়, জবাবদিহিতা থাকে। কিন্তু এবারের বাজেট ঘাটতি হবে বিশাল। আর এর বোঝা চাপবে জনগণের ওপর।