নিউজ ডেস্ক:আলমডাঙ্গা উপজেলায় পুকুর খননের নামে ফসলি জমির মাটি কেটে তা ইটভাটায় বিক্রয়ের এক রমরমা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় আলমডাঙ্গার সাধারণ কৃষকেরা ঝুঁকছেন এসব পুকুর খননের দিকে। এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী ও ভাটা মালিকের প্রলোভনে কৃষকেরা চাষের পরিবর্তে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন দিন দিন। এতে ফসলি জমির উর্বরাশক্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই মাটি পরিবহনের সময় আশপাশের জমির ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নজুড়ে অধিকাংশ কৃষি জমিতে মেশিন দিয়ে ৮ ফুট গভীর করে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। এর ফলে ফসলি জমি থেকে কাটা পড়ছে মাটির উপরি ভাগের হিউমাস সমৃদ্ধ ১-৬ ইঞ্চি অংশ ‘টপ সয়েল’, যে অংশটিতে উদ্ভিদের মাইক্রো ও ম্যাক্রো উপাদান বিদ্যামান। যার মাধ্যমে উদ্ভিদ তার জীবনী শক্তি ফিরে পায় এবং দ্রুত বেড়ে ওঠে। অথচ সচেতনতার অভাবে মাটি ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে অধিক মুনাফার লোভে কৃষকেরা রাত-দিন বিরতিহীনভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি আমডাঙ্গার বিভিন্ন ইটভাটাতে সরবরাহ করছেন। এর ফলে কৃষকেরা হারাচ্ছেন তাঁদের ফসলি জমির গুণগত মান আর অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে উপজেলার নাগদাহ, আইলহাঁস, জেহালা, বাড়াদী, কুমারী, হারদী, জামজামি, বেলগাছী ও কালিদাসপুর ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি লক্ষ করা গেছে। এসব এলাকায় ফসলি জমির মাটির গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মাটি বহন করা ট্রাক্টরে নানা দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়াও ট্রাক্টরে বহনকৃত মাটি রাস্তায় পড়ার ফলে এলাকার স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ লোকজনের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত জমিও এই মাটি ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নদী-নালা-খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তিনামা করে মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে এসব পুকুর। কৃষকের কাছ থেকে কিনে ফসলি জমির এসব মাটি গাড়িপ্রতি (ট্রাক্টর) ৫ শ থেকে ৭ শ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রয় করছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করায় দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির গুণগত মান। জানা গেছে, ফসলি জমির ‘টপ সয়েল’ বিক্রি করে দিলে এর ঘাটতি পূরণ করতে লাগে ১৫-২০ বছর। এর সময়ে ওই জমিতে যে ফসলই উৎপাদন করা হোক না কেন, নিশ্চিতভাবে কাক্সিক্ষত উৎপাদন সম্ভব নয়। এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা জানান, ফসলি জমি থেকে এভাবে মাটি কাটা হলে জমি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে এবং আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়ে নাগদাহ ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার জমির ওপর দিয়ে চলছে মাটি টানার গাড়ি। কোনো কথাই শুনছে না মাটি ব্যবসায়ীরা। বাধা দিলে নানা ধরনের হুমকি দেয়। নিজের জমিতেই এখন চাষ করতে পারছি না।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি পুকুর খনন থেকে বিরত থাকার জন্য। ফসলি জমির গুণগত মান রক্ষার্থে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সীমা শারমিন।