২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গী হিসেবে নাম ঘোষণার পর বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সফর বাতিলের কারণ তিস্তা চুক্তিতে তার সায় না থাকা।
২০১১ থেকে ২০২৪। গেল প্রায় ১৩ বছর ধরে তিস্তা চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশের অধিকার থাকলেও সেই পানির ন্যায্য ভাগও পায়নি ভাটির দেশের লাখ লাখ মানুষ। যার ফল স্বরূপ উত্তরবঙ্গে কখনো বন্যা, কখনো তীব্র খরা।
তিস্তার বাগড়া দেয়ার পর এবার পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধানের নজর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়নের দিকেও। লোকসভা ভোটের সময় মুর্শিদাবাদে প্রচারে গিয়ে ফারাক্কার ব্যারাজ লাগোয়া মানুষকে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা। আর এবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সরাসরি তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি নিয়ে রণংদেহী রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী।
এতেই মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে যারা কাজ করেন, সেই বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এই ধরনের আচরণ প্রতিবেশী দুই দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ভারতীয় বর্ষীয়ান সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, মমতা নিজে মনে করছেন তিনি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনিই একজন প্রধানমন্ত্রী। তার এই চিন্তা-ভাবনা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি ভেস্তে দেয়ার পেছনে মমতার অবস্থানের সমালোচনা করেন। বলেন, তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন তিনবার মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝাতে এসেছিলেন কলকাতায়। কিন্তু মমতা বোঝেননি।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতার চরম বৈরি সম্পর্ক। বিশেষ করে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকে যেভাবে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার অভিযান শুরু করেছে।
একের পর এক মমতার মন্ত্রী, নেতাকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সঙ্গে রেশন, সরকারি বাড়ি বরাদ্দসহ নানা সরকারি চাকরি চুরির কারণে মমতা সরকারকে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য বন্ধ রাখার মতো কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে মোদি প্রশাসন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির সঙ্গে নেতিবাচক সম্পর্কের কারণেই গঙ্গা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মমতার কঠোর অবস্থান।