নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মার্কিন বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞতা বিনিময়
জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে এফবিআইসহ মার্কিন কয়েকটি সংস্থা। বাংলাদেশে একের পর এক জঙ্গিরা পরাস্ত হওয়ায় বিদেশি সংস্থাগুলো একবাক্যে বলেছে, ঢাকার গোয়েন্দারা খুবই দক্ষ। তারা বৈশ্বিক সন্ত্রাস মোকাবিলায় সক্ষম। বিশেষ করে এফবিআইসহ যে কয়েকটি সংস্থায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আছে, ওই সব সংস্থার নজরে এসেছে বাংলাদেশে নতুন চালু হওয়া ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটটি। এই নতুন ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন কৌশল ও অভিজ্ঞাতা বিনিময় করেছেন মার্কিন সংস্থার কর্মকর্তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জঙ্গি-সন্ত্রাস ও আন্তঃদেশীয় অপরাধী দমনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংস্থার আমন্ত্রণে যাওয়া প্রতিনিধি দলটি বর্তমানে লসঅ্যাঞ্জেলেস আছে। প্রতিনিধি দলটির সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
প্রতিনিধি দলের এক কর্মকর্তা মানবকণ্ঠকে বলেন, ঢাকার টিমের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়কালে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গি দমন নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা চলমান জঙ্গি দমনে ঢাকার গোয়েন্দাদের দক্ষতার প্রশংসা করেন।
গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের একাধিক ইউনিটের অভিযানে ৩৩ জঙ্গি নিহত হয়। কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, আজিমপুর ও গাজীপুরে পাঁচটি আস্তানায় হানা দেয় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। আর এসব অভিযানের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নজরে আসে বাংলাদেশে চালু হওয়া নতুন ইউনিটটি। বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ আসতে থাকে। সেই আমন্ত্রণের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়।
জানা গেছে, সফররত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিটিটিসি ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার মো. আমিনুল ইসলাম। বাংলদেশ থেকে সফরকারী দলটির যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলসে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটি বিশ্বমানের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আন্তর্জাতিকভাবে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট পরিচিত লাভ করে। বিশেষ করে বিশ্বের যেসব দেশে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আছে, ওই সব দেশের নজরে আসে ডিএমপির নতুন এই সিটিটিসি ইউনিট। বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন এই ইউনিটকে তাদের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থ এফবিআইয়ের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, লসঅ্যাঞ্জেলেস কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, লসঅ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, ইউএস অ্যাটর্নি অফিস, ইউএসকোর্ট হাউস, জয়েন্ট রিজিওনাল ইন্টিলিজেন্স সেন্টারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে।
বিশেষ করে এফবিআই ও লসঅ্যাঞ্জেলেস কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, লসঅ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে কয়েকটি অভিযানের কথা উল্লেখ করেছে। এসব অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা জেনে নেয়। এ সময় বিদেশি সংস্থাগুলোর পক্ষে বলা হয়েছে, দূর থেকে হলেও তারা বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনাগুলো দেখেছে। বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচার জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ভিডিও এবং স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে রেখেছে মার্কিন সংস্থাগুলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্টে অবস্থানরত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলো তাদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত কৌশল এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। পাশাপাশি ট্যাকটিক্যাল এনালাইসিস, নিখুঁত তদন্ত, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পদ্ধতি ও বিগ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। একপর্যায় চলমান জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে মার্কিন সংস্থাগুলো। জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে ঢাকার গোয়েন্দারা দক্ষ, কৌশলী এবং পেশাদার বলেও তারা উল্লেখ করেন। বৈশ্বিক সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে বলেও বিশ্বমানের সংস্থাগুলোর পক্ষে মন্তব্য করা হয়েছে।