নিউজ ডেস্ক:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-বিজিএমইএর সুদৃঢ় অংশীদারিত্বের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে ও জনমনে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যেই নানা ধরনের ভুল তথ্য পরিবেশন হচ্ছে বলে মনে করে এনবিআর।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বরাবর পাঠানো চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এনবিআরের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রথম সচিব (কাস্টমস রপ্তানি ও বন্ড) মো. আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যানের মন্তব্য বিষয়ে সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিভ্রান্তিমূলক ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে চার হাজার আটান্নটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অনিয়মের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এবং ঢালাওভাবে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। যা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, গত ১১ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এবিআরের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান অবহিত করেন যে, কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। এরই অংশ হিসেবে জানা গেছে, মেসার্স এসএন ডিজাইন নামীয় একটি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিদেশে ২৯৭টি কন্টেইনার রপ্তানি করেছে। কিন্তু তার বিপরীতে দেশে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা আসেনি। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর তদন্ত করছে।
এনবিআর মনে করে, বিজিএমইএর সদস্য পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ এনবিআরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পোশাক শিল্পের বর্তমান অগ্রযাত্রায় এনবিআর সর্বদাই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। বন্ড লাইসেন্স ও এ সংক্রান্ত সেবা প্রদানের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গার্মেন্টস শিল্পের যাবতীয় কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান হয়। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক শিল্পে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে এনবিআর সর্বোচ্চ প্রণোদনা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এনবিআর বিশ্বাস করে বিজেএমইএর সদস্যরা তাদের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে, অপরদিকে দেশের জন্য সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই অবদানের জন্য বিজিএমইএর পাশে এনবিআর সবসময় থাকবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। কিছু সংবাদপত্র এনবিআর ও বিজিএমইএ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে ও জনমনে বিভ্রান্তির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের ভুল তথ্য পরিবেশন করছে।
বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশনায় প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে ভুল ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এনবিআরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এ ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে এনবিআর ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে এনবিআর চেয়ারম্যান আয়কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে যে মুহূর্তে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের লক্ষ্যে কাজে মনোনিবেশ করছে, সে সময় প্রতিশোধপরায়ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা রাষ্ট্র ও জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের পরিচায়ক। এ ধরনের অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ না হলে জনস্বার্থে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।