বাল্যবিবাহর হাত থেকে রক্ষা পেল স্কুলছাত্রী
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর বিলপাড়ার গরু ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের কন্যা ‘ফুল’ (ছদ্দনাম)। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সনদ অনুযায়ী বয়স মাত্র ১৪ বছর ৮ মাস। আগামী বছর উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। নিজের মেধা ও যোগ্যতাই আত্মনির্ভরশীল হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু ফুলের সে ইচ্ছে মূল্যহীন পরিবারের অভিভাবকদের কাছে। প্রথমত মায়ের অবর্তমানে সৎ মা শারমিন খাতুনই তার প্রধান অভিভাবক। তিনি থাকেন দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুরে বাবার বাড়িতে, সঙ্গে রাখতে চান স্বামী জাকির হোসেনকেও। তবে মেয়ে ফুল যেন ছিল তাদের বড় বোঝা। তাই ঠিক করলেন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শিগগিরই দায়মুক্ত হতে হবে। মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক জেনেও সম্বন্ধ পাঁকা করা হলো বেগমপুর হিজলগাড়ীর এক ছেলের সঙ্গে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি ও বাল্যবিবাহর হাত থেকে রক্ষা পেতে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায় মুঠোফোনে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর বিশেষ প্রতিবেদক এস এম শাফায়েতের মাধ্যমে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে ফুল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি বেগমপুর ক্যাম্পের টুআইসি (এএসআই) আশরাফুজ্জামান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেকড়ের সভাপতি শামীম হোসেন মিজিকে জানালে তাঁরাসহ স্থানীয় দুইজন স্কুলশিক্ষক ফুলের বাড়িতে যেতে রাজি হন। কিছুক্ষণ পর বেগমপুর বিলপাড়ার জাকির হোসেনের বাড়ি হাজির পুরো টিম। পিতা জাকির হোসেন ও সৎ মা শারমিন খাতুনের সঙ্গে কথা বলে ফুলের বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। মেয়ে বড় হয়ে গেছে, এত পড়াশোনা করে কাজ নেই, বিয়ে দিয়ে পার করতে পারলেই রক্ষা। এ সময় বাল্যবিবাহের কুফল ও এর বিরুদ্ধে কঠোর দ-ের ব্যাপারে তাঁদের ধারণা দেন উপস্থিত সাংবাদিক ও শিক্ষকেরা।
এদিকে, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে না শর্তে প্রাথমিকভাবে তাঁদেরকে সতর্ক করে দেন টুআইসি আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সময়ের সমীকরণ-এর সাংবাদিক এস এম শাফায়েত ও শামীম হোসেন মিজির মাধ্যমে জানতে পারি, বেগমপুর বিলপাড়ার জাকির হোসেনের অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুলপড়–য়া মেয়ের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। এ খবরের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্যবিবাহের সত্যতা পায়। ওই মেয়ের জন্মসনদ, স্কুল সার্টিফিকেট কোনোটিতেই ১৮ বছর প্রমাণ করতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। তাই তাঁদের বাল্যবিবাহের কুফল ও আইন-কানুন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বিয়ে বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়।’