নিউজ ডেস্ক:
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে মস্কো যাচ্ছেন গণচীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, এ সফরে মূলত সামরিক রণনীতি নিয়েই দুই দেশের শীর্ষনেতাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং সমঝোতা হবে। এই সমঝোতার পর্ব অবশ্য গত বছরেই শুরু হয়েছিল।
অন্যদিকে চীনের গুয়াংদং উপকূলে প্রথমবারের মতো দুই দেশ সামরিক মহড়ায় অংশ নিল। সম্প্রতি তারা যৌথভাবে নৌ মহড়া চালাল ইউরোপের বুকে, বাল্টিক সাগরে। আর রুশ-চীন এই সামরিক ঘনিষ্ঠতাকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না মার্কিন প্রশাসন।
কিন্তু তারা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে, যাই ঘটুক ব্যাপারটা তাদের হজম করতে হবে। বিশ শতকের গোড়া থেকেই বাল্টিক সাগর ইউরোপের শক্তিগুলির কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক অঞ্চল। হাল আমলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ওই সামুদ্রিক তল্লাটে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোর চাপ যত বাড়ছে, ততই রাশিয়াও আর হাত গুটিয়ে বসে থাকছে না। আমেরিকা আর বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া মিলে যৌথ সামরিক মহড়া করতে না করতেই রাশিয়া ও চীন মিলে সেখানে যৌথ নৌ মহড়া চালিয়েছে। আর তা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই একসুরে গাল পাড়তে শুরু করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন ও লিথুয়ানিয়ার সরকার।
যদিও বেজিংয়ের রুশ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বিষয়টি নিতান্তই রুটিন ব্যাপার। এ নিয়ে অযথা উত্তেজনার কোনও কারণ নেই।
উত্তেজনার কারণ আমেরিকা ও তার মিত্রজোট ন্যাটোর অবশ্যই আছে। তবে, জোটনিরপেক্ষ ভারতের দিক থেকে এ নিয়ে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। রাশিয়া ও চীনের এই সামরিক গাঁটছড়ার মূল উদ্দেশ্য আমেরিকা ও তার এশীয়-ইউরোপীয় মিত্রশক্তির কাউন্টার ব্যালেন্স তৈরি করা। ভারতকে চাপে ফেলার জন্য এই সামরিক জোট তৈরি হয়নি। বালটিক সাগরে আমেরিকার দিক থেকে ন্যাটো জোটকে মজবুত করার উদ্দেশ্যই হল রাশিয়াকে চাপে রাখা। এই অবস্থায় রাশিয়া আর চীন, অর্থাৎ বিশ্বের দুই এবং তিন নম্বর সামরিক শক্তি একত্রে মিলে যদি তাদের পালটা রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাতে জোটনিরপেক্ষ ভারতের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ থাকতে পারে কী?
একটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার৷ চীন-ভারত যে সামরিক টেনশন অব্যাহত সেটা আঞ্চলিক। আর, ইউরোপ সহ অন্যান্য সমুদ্র অঞ্চলে যে দ্বিমেরুকরণ ঘটছে তার প্রভাব কিন্তু বিশ্বজোড়া। সেখানে একদিকে রয়েছে আমেরিকা ও তার সামরিক মিত্রজোট, অন্যদিকে আবারও কাছাকাছি আসছে রাশিয়া এবং চীন। আরও বিস্তারিতভাবে ধরলে শুধু রাশিয়া-চীন নয়, এই জোটে ধাপে ধাপে শামিল হচ্ছে মধ্য এশিয়া সহ ভারতীয় উপমহাদেশ৷ কিছুদিন আগেই তাই সব কটি দেশ মিলে সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।
মার্কিন প্রশাসন যদি পূর্ব গোলার্ধে তাদের সামরিক শক্তি জানান দিতে উত্তরোত্তর তৎপরতা বাড়ায়, তাহলে পূর্ব গোলার্ধের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না— এটা বোঝার জন্য খুব মাথা খাটানোর দরকার নেই। আসলে আমেরিকার কর্তারা ভাবতে পারেননি, লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে তাঁদের মধুচন্দ্রিমার সময়েই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন একেবারে বাল্টিক সাগরের রুশ উপকূল কালিনিনগ্রাদে চীনা নৌবাহিনীকে ডেকে এনে সামরিক মহড়া চালাবেন। এটাই হোয়াইট হাউসের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর