নিউজ ডেস্ক:
১১ বছরের জারার ম্যাচিওরিটি দেখলে চমকে ওঠে সবাই। বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন। জারা স্কুল থেকে ফিরে জামা-জুতা ঠিকমতো গুছিয়ে রাখে। ওভেনে খাবার গরম করে। ছোট ভাইয়েরও বেশ যত্ন নেয়। এমনকি বাবা-মায়ের বিবাহ বার্ষিকীতে কেক তৈরি করে তাদের অবাক করে দিয়েছে সে।
এজন্য জারার মা কেয়াকে অনেকেই হিংসা করে। আসলে কেয়া নিজেও খুব গোছানো, নিয়মনিষ্ঠ। তার এই গুণগুলো ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়ের ভেতর সে গেঁথে দিয়েছে। বাড়ির সহজ কাজ নিজের হাতে দায়িত্ব নিয়ে করতে শিখিয়েছে জারাকে তার মা। এতে কেয়ার কাজ অনেকটা সহজ হয়েছে। জারাও আত্নবিশ্বাসী ও কর্মঠ হয়েছে ছোট থেকেই।
সব বাচ্চারাই যে এমন স্বাবলম্বী তা কিন্তু নয়। তাই অনেক মায়েরাই অভিযোগ করেন বাচ্চার অগোছালো স্বভাব নিয়ে। আবার তারা মুখ বুজে মেনেও নেন। বাবা-মায়ের কথা আর কাজের পার্থক্যই অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হতে দেয় না।
বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করে তোলা আসলেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে বাচ্চাদের নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন চলুন তা আলোচনা করা যাক।
শুরু করতে দেরি করবেন না
বাবা-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে, যে বয়স থেকে বাচ্চারা কথা বুঝতে পারে, সেই সময় থেকেই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এর প্রথম ধাপই হল, নিজের কাজ নিজে করা। আপনি ওর কাজ করার সময় ওকে সঙ্গে রাখুন। দু-একটা জামা ভাঁজ করতে দিন। কাজের সময় গল্প বা গান করলে ওর উৎসাহ বাড়বে। স্কুলে ভর্তির পর থেকেই প্রতি রাতে ওর জামা, জুতা, স্কুল ব্যাগ গোছানো ওকে দেখিয়ে দিন। একটু বড় হলেই আপনি আর সাহায্য না করে একা করতে শেখান।
কাজের বদলে উপহার নয়
বাচ্চার মনে ছোটবেলা থেকেই গেঁথে দিন, পরিবারের কাজে সাহায্য করা সবার দায়িত্ব। কিন্তু কোনো কাজ করার জন্য খুশি হয়ে উপহার দেবেন না। এমনকি চকলেটও নয়। কারণ কাজ করার জন্য উপহার দেওয়াটা ঘুষ দেওয়ার শামিল। তবে মন খুলে কাজের প্রশংসা করতে ভুলবেন না যেন।
বিশ্বাস রাখুন
বাচ্চার বয়স ৭-৮ বছর হলেই ওকে ঘরের টুকটাক কিছু কাজ করতে দিন। ছোট ভাই-বোনের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব দিন। বিশ্বাস হারাবেন না। ওকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিন। ওর মনোবল ভেঙে যায় এমন কিছু বলবেন না। তাছাড়া কোনোরকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে তাই প্রথম প্রথম কাজের সময় ওর আশেপাশে থাকুন।
ভুল করতেই পারে
কাজ শুরুর দিকে ভুল হতেই পারে। ওর করা কাজটা হয়তো আপনাকে আবার করতে হবে। রেগে যাবেন না। বকা দেবেন না। ধৈর্য ধরুন। ওর পাশে থেকে ওকে সাহায্য করুন। যতদিন না নিজেই কাজটা করতে পারে, প্রয়োজনে ততদিন বারবার দেখিয়ে দিন। ওকে বকাঝকা করলে ও কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আপনি নিজে যেভাবে নিখুঁতভাবে করেন, আপনার বাচ্চাও সেভাবে করবে- এমনটা আশা করবেন না। ও যেমনই করুক, চেষ্টার প্রশংসা করুন।
সিদ্ধান্ত নিতে দিন
যখন বাচ্চাকে দায়িত্ব দেবেন সঙ্গে সঙ্গে কিছু স্বাধীনতাও দিন। ও কোন জামা পড়বে, টিফিনে কী খাবে ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। সবসময় নিজের মতামত চাপিয়ে দেবেন না। ওর বন্ধুদের জন্মদিনে কী উপহার দেবে, কেমন খরচ হবে তা ওকেই ভাবতে দিন। এতে করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বাজেট করাটাও ও শিখে যাবে।