নিউজ ডেস্ক:
দুই দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কম্বোডিয়ায় সোমবার বিকেলে হোটেল সোফিটেলে বাংলাদেশ-কম্বোডিয়া বাণিজ্য সংলাপে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন দুই দেশের মানুষের সমৃদ্ধির অন্বেষায় আমরা অংশীদার হই এবং একসঙ্গে দুদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনের পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হই।’
কম্বোডিয়ার চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কম্বোডিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী প্যান সোরাসাক ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বিশেষ অতিথি ছিলেন। এছাড়া কম্বোডিয়ার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কিথ মের এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া মুনা তাসনিম।
কম্বোডিয়ার নার বিষয়কমন্ত্রী ইং কানথা পাবি ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে কম্বোডিয়ার শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন্।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতে পারে। কারণ চীন, মিয়ানমার ও ভারতের অর্থনৈতিক করিডোরের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্তি ক্রমশ বেড়েই চলছে।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও একইভাবে কম্বোডিয়ায় বাণিজ্য সুবিধা অন্বেষণে আগ্রহী।
এফবিসিসিআই ও কম্বোডিয়ার চেম্বার অব কমার্সের মধ্যকার সহযোগিতা চুক্তির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চুক্তির সুবাদে দুদেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিস্তৃত হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী যে, দুই চেম্বারের মধ্যে স্থাপিত এই সহযোগিতা পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহে উৎসাহ জোগাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ অধিকাংশ আসিয়ান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পর্কে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের স্থল সেতু (ল্যান্ড ব্রিজ) হিসেবে গণ্য করে এবং আসিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য খুবই ন্যূনতম যা বছরে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম। এতে প্রকৃত অর্থে বলিষ্ঠ কোনো সম্ভাবনার প্রতিফলন নেই। অন্যান্য আসিয়ান দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমি আশা করি কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও এর প্রতিফলন ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রয় ক্ষমতার সমতার দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। কৃষি খাতের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে যে, এই খাত ক্রমান্বয়ে আধুনিক, প্রক্রিয়াজাত ভিত্তিক, বহুমুখী ও লাভজনক হয়ে উঠছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতিমালা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শুল্ক ছাড়, রয়্যালিটিতে রেমিট্যান্স, শতভাগ বৈদেশিক ইক্যুয়িটি, ডিভিডেন্ড ও পুঁজির বাধাহীন প্রবেশ নীতিমালাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।’
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিশ্রমী ও সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য যুব কর্মীবাহিনী, তুলনামূলক কম মজুরি, ব্যবসা পরিচালনায় স্বল্প ব্যয় এবং ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের সাফল্যে সারা বিশ্ব জানে। তৈরি পোশাক খাতের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও এখানে দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি হচ্ছে, যার মধ্যে ওষুধ শিল্পও অন্যতম।
তিনি বলেন, ‘দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসহ ১২০টি দেশে ওষুধ সামগ্রী রপ্তানি করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বর্তমানে বায়োটেক প্রোডাক্টস ও একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই) উৎপাদনে সক্ষম। বাংলাদেশ উচ্চ গুণগতমান ও স্বল্প ব্যয়ে ওষুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্রুত উদীয়মান দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক শিল্প, আইসিটি ও এ সম্পর্কিত শিল্পও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্পও বাংলাদেশের দ্রুত উদীয়মান শিল্প। আমাদের নির্মাতারা বিশ্বমানের মাঝারি আকারের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়ন বাংলাদেশের নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি বিশেষ ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আইটি শিল্প ও বিনিয়োগের লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশে বেশকিছু হাইটেক পার্ক উন্নয়নের কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও রপ্তানি হয়েছে ৩৪.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের মাধ্যমে দেশের ১৬ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবনকে ডিজিটাল জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত করতে চাই।’
তিনি বলেন, দুই দশকেরও কম সময়ে দেশে দারিদ্র্য শতকরা ৫৭ ভাগ থেকে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ সময়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ বছরে দাডিঁয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার এবং আমাদের জিডিপি ২৫০ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে।’
সোমবার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘কম্বোডিয়ায় আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। আমরা কম্বোডিয়ায় খাদ্য শস্য উৎপাদন ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারি। এতে কম্বোডিয়ার মতো আমাদেরও চাহিদা মিটবে এবং প্রয়োজনে বাইরেও রপ্তানি করা যাবে।’
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কম্বোডিয়ায় খাদ্যশস্য ও খাদ্যজাত পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তথ্যসূত্র : বাসস