বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে ক্যালিফোর্নিয়া-নিউইয়র্কে বিক্ষোভ !

0
33

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশি মোস্তাফিজুর রহমান সেন্টু (৫০) নিহতের ঘটনায় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউইয়র্কে বিক্ষোভ করেছে প্রবাসীরা। গত শুক্রবার ওই বিক্ষোভ থেকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কঠোর সমালোচনা করা হয়।

গত শুক্রবার বাদ জুমআ ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ড সিটির ডাউন টাউন মসজিদে জামালপুর জেলা সদরের পিয়ারপুরের সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লী অংশ নেন। মোস্তাফিজুর রহমানের মরদেহ স্থানীয় হিলক্রেস্ট গোরস্থানে দাফন করা হয়।

প্রবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি নিছক কোন হত্যাকাণ্ড নয়। এটি ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক হত্যাকাণ্ড। কারণ, তার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে আটবার গুলি করা হয়। এরমধ্যে পাঁচটি বুলেট বাম বুকেই বিদ্ধ ছিল। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গুলি চালানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১২ জুন সোমবার ভোর ৫টায় ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস সিটি থেকে ১৮০ মাইল দূর বেকার্সফিল্ড সিটির নিজ বাসার ড্রাইভওয়েতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সেন্টু।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ঘাতকের গ্রেফতার দাবিতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা।

বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভানেত্রী ও জামালপুর জেলা সমিতির সভাপতি মোর্শেদা জামান বলেন, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বাংলাদেশিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সেন্টুর মতো অসহায় মৃত্যু আর কারো হয়নি। রাতের শিফটে কাজ শেষে ভোরে বাসায় ফিরে এমন করুণ মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।

আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি লাবলু আনসার বলেন, নৃশংসভাবে হত্যার পর পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ঘাতককে শনাক্ত করাই সম্ভব হয়নি, গ্রেফতার দূরের কথা। এভাবেই বাংলাদেশি-আমেরিকানরা বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হচ্ছেন।

গত তিন বছরে আমেরিকার নিউইয়র্ক, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আলাবামা, ওকলাহোমা, নিউ জার্সি প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে ১৫ বাংলাদেশির প্রাণ গেছে দুর্বৃত্তের হাতে। অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে একমাত্র সেন্টুর ঘাতকই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। অর্থাৎ ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ এ নিয়ে আন্তরিক অর্থে সোচ্চার হয়নি বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে।

একাত্তরের সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সদস্য-সচিব রেজাউল বারী বলেন, এখন সময় খারাপ। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে হবে যে, বাঙালিরাও ভোটে বড় একটি শক্তি।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা আশরাফুজ্জামান বলেন, ছোট ছোট তিনটি সন্তান এবং স্ত্রী রয়েছে সেন্টুর। তিনি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে সাত বছর আগে এসেছিলেন আমেরিকায়। কিন্তু ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হয়ে তাকে চলে যেতে হলো। আমরা এমন পরিস্থিতি দেখতে চাই না।

যুক্তরাষ্ট্র ল’ সোসাইটির নেতা এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবুল বলেন, যেখানেই আক্রমণ হবে, সেখানেই সকলকে সোচ্চার হতে হবে। অন্যথায় এহেন পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আলম বলেন, সেন্টুর ঘাতক গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাজপথে সোচ্চার থাকতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহবায়ক তারেকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং কন্সাল জেনারেলকে মার্কিন প্রশাসনের সাথে দেন-দরবার করতে হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহবায়ক রাশেদ আহমেদ, কম্যুনিটি নেতা ফিরোজ মাহমুদ, কুইন্স যুবলীগের সভাপতি নান্টু মিয়া প্রমুখ। সকলের হাতেই ছিল হত্যাকাণ্ড এবং বিদ্বেষমূলক অপরাধ প্রতিরোধের স্লোগান সংবলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। এ সময় আশপাশের ভিনদেশীরাও সেন্টুর ঘাতককে অবিলম্বে গ্রেফতার দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।