উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১১টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভয়াবহ সংকটে এখনও পানিবন্দি এসব দুর্গত এলাকার মানুষ। এদিকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি সাধারণ মানুষের। বানের পানি নেমে যাওয়ার সাথে বেরিয়ে আসছে ক্ষতচিহ্ন। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ভোগান্তিতে যোগ করছে নতুন মাত্রা।
আরও অবনতি হয়েছে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতির। এখনও পানিবন্দি প্রায় ৭ লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে ২০ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শনিবার (২৪ আগস্ট) খুলে দেয়া হয় নোয়াখালীর স্লুইসগেটের ২৩টি রেগুলেটর। সেই পানি লক্ষ্মীপুরের নদী-খাল হয়ে মিশবে সাগরে। উপচে পড়া জল মেঘনাসহ আশপাশের খাল-বিলে জমেছে। জলমগ্ন সদরসহ ৫ উপজেলা। আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসীরা।
সোনাগাজী ও দাগনভূঞা ছাড়া ফেনীতে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া থেকে পানি কিছুটা নেমেছে। তবে নতুন করে আরও কয়েকটি ইউনিয়ন নিমজ্জিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সোনাগাজী ও দাগনভূঞার অবস্থা ভয়াবহ। এই মুহূর্তে ফেনী সদর, ফুলগাজী ও সোনাগাজীর মানুষের ত্রাণের বেশি প্রয়োজন। তবে বহু এলাকা থেকে জোর করে ত্রাণ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তিন দিন আগে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। শুক্রবার থেকে নতুন করে অনেক গ্রাম প্লাবিত হতে থাকে। ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পায়।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বুড়িরচংসহ ১৪ উপজেলার ১১৮টি ইউনিয়ন তলিয়েছে বানের জলে। পানিবন্দি প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পানি, নৌকা ও খাবার পানির সংকট বাড়ছে বলে জানা গেছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে হবিগঞ্জে। ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বানভাসীরা। তবে চারদিকেই বন্যার ক্ষত। সড়ক থেকে শুরু করে গৃহস্থের ঘর, কিছুই আর অক্ষত নেই।
পানি কমেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। তবে এখনও জলমগ্ন কসবাসহ নিম্নাঞ্চল। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পাশে আছে স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া, মৌলভীবাজারেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে চোখ রাঙাচ্ছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি।
রাত থেকে কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে খুলনা নগরীতে। ভারী থেকে মাঝারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে নগরীর পথঘাট। বাসাবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। সড়ক জলমগ্ন থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ে কর্মজীবী মানুষ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে খুলনা বিভাগে। ২৭ আগস্টের পর থেকে বৃষ্টি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
খাগড়াছড়িতে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে পানি। স্পষ্ট হতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে থাকায় ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে পানি নামার ৩ দিনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি সদরসহ দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার শতাধিক পরিবার। অনেকের ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে, ক্ষতি হয়েছে বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশের শাক সব্জির ক্ষেত।
এদিকে, আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে খুলে দেয়া হয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ের ১৬টি গেইট দিয়ে ৬ ইঞ্চি করে পানি ছাড়া শুরু হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, ভয়াবহ বন্যায় দেশের ৭ জেলায় ১৮ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ৯ হাজার মানুষ।