নিউজ ডেস্ক:
ফের রাজধানী থেকে একই দিনে চার যুবক নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- হাসান মাহমুদ (২৬), ইমাম হোসেন (২৭), কামাল হোসেন (২৪) ও তাওহীদুর রহমান (২৬)।
গত ৩ জুন তারা নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বনানী থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ চারজনের মধ্যে হাসান, ইমাম ও কামাল বনানী এলাকার একটি আইটি ফার্মে চাকরি করতেন। অপরজন তাওহীদুর রহমানের বাবা মহাখালী এলাকার একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন। এ ছাড়া নিখোঁজ তিনজন চট্টগ্রামের একই পরিবারে বিয়েও করেছেন।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক বজলুর রহমান জানান, গত ৩ জুন রাতে কামালের মামা রশিদ আলম থানায় এসে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, ওই দিন থেকে তার ভাগিনা কামাল ও তার সহকর্মী হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তাদের আরেক সহকর্মী ইমামের সহযোগিতা চাইলে ওই দিন বিকেলে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ও কামালের একটি ছবি দিয়ে খুঁজতে সাহায্য চান। এর পর থেকে ইমামেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বজলুর রহমান বলেন, ৪ জুন ইমাম হোসেনের বাবা বিল্লাল হোসেন ছেলে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এই দুই জিডি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, ওই দিন থেকে তাওহীদুরও নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি বলেন, নিখোঁজদের মধ্যে কামাল নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করে ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে একই মালিকের দুটি প্রতিষ্ঠানে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ইমাম ও হাসান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে টেলেক্স লিমিডেটে চাকরি নেন। হাসান ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও ইমাম, সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। তাওহীদ কোনো কাজ করতেন না। তবে তার বাবা মহাখালীর একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
তা ছাড়া হাসান, ইমাম ও কামাল চট্টগ্রামে একই পরিবারে বিয়ে করেছেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
গতকাল বুধবার রাতে বজলুর রহমান জানান, নিখোঁজ তিনজনের অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ ডিসেম্বর রাতে বনানী কাঁচাবাজার এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসাইন খান পাভেল, মোহাম্মদ সুজন ও মেহেদী হাওলাদার নামের চারজন। এদের মধ্যে সাফায়েত ও জায়েন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। সুজন এশিয়াটিক অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করতেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরির খোঁজে মেহেদী ২৬ নভেম্বর ঢাকায় এসেছিলেন। নিখোঁজের পর ২ ও ৩ ডিসেম্বর বনানী থানায় আলাদা দুটি ডিজি করেছিলেন করেন তাদের স্বজনরা। পরে গত ১৮ এপ্রিল নিখোঁজদের মধ্যে মেহেদী বাড়ি ফিরেছিলেন।
এর আগে ওই বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় যারা জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল তারা এভাবেই আচমকা নিখোঁজ হয়েছিল। হামলার পরবর্তীকালে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, নিখোঁজ হওয়ার তাদের ব্যাপারে থানায় জিডিও করা হয়েছিল। কিন্তু যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো অনুসন্ধান করা হয়নি।
এ ছাড়া ওই হামলার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট পরবর্তীকালে যেসব জঙ্গি অভিযান চালিয়েছিল সেখানে আটক ও নিহত বেশ কয়েকজন যুবক আচমকা নিখোঁজ হয়েছিলেন বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। পরে তাদের জঙ্গি আস্তানায় পাওয়া গিয়েছিল।