নিউজ ডেস্ক:
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এ জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারলে প্রবৃদ্ধি ৮-১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানির বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘রিথিংকিং পলিটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট : সিকিউরিটি অ্যান্ড ফ্রিডম বেজড অন জাস্টিস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সাদিক আহমেদ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রথম দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান খান ও ড. তাজিন মোরসেদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা স্থানীয় সরকাকে রিস্ট্রাকচারিং করা। আয়তন কম হলেও জনসংখ্যা অনেক বড়। এরা আবার শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। আমার মনে হয়, প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। কেবল সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্বও স্থানীয় সরকারের হাতে যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তা ধারাও খুব স্বচ্ছ নয়।
তিনি বলেন, যতই বলি না কেন, আমরা সেদিক দিয়ে আমরা স্থানীয় সরকারের জন্য তেমন কিছু করি নাই। স্থানীয় সরকার বর্তমানে কেবল সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন উদ্যোগে সম্পৃক্ত, তাদের অধীনস্থ হিসাবে স্থানীয় সরকার কাজ করে। সে কাজগুলো স্থানীয় সরকারে খুব কম হয়। সে কাজগুলোর জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের নিম্নতম পর্যায়ের কর্মচারীরা সেটা করে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা পরিবর্তন কীভাবে করা যায়, তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং কষ্টকর। কারণ আমাদের যে ১৮ লাখ ব্যুরোক্রেসি আছে, তারা কোনোভাবেই সেই ক্ষমতার প্রতি সংস্থাপন হতে দেন না। চাইলে না চাইলেও অটোমেটিক তারাই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস করার একমাত্র ক্ষমতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এই জন্য স্থানীয় সরকার সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে চাই, তাহলে স্থানীয় সরকারের কাঠামো, দায়িত্ব, অর্থায়নগুলো নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে দু-এক লাখ কেন্দ্রীয় সরকারে রেখে ১৮ লাখ কর্মচারীদেরকে স্থায়ীভাবে জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। ওখানেই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পরিবর্তন করা যেতে পারে।
মুহিত বলেন, বিশ্বে ৫০ থেকে ৬০টি দেশ আছে, যারা আমাদের চেয়ে ছোট। প্রায় একই সংখ্যক দেশ আছে যাদের জনসংখ্যা কম। তার মানে আমাদের জেলা ইউনিট অটোনোমাস স্টেট হওয়ার মত। স্টেটের দিকে আমাদের যাওয়া উচিত। তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮-১০ শতাংশ সম্ভব হবে।
এ ছাড়া জেলাতে যদি সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে সেখানে পাবলিক সার্ভিস অনেক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দেওয়া যাবে। এখন একটা কিছু করতে গেলে ঢাকায় আসতে হবে। জেলাতে সে রকম অবস্থা নাই।
পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ তার প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবকিছুই ইতিবাচক। কেবল একটা বিষয়ই নেতিবাচক। সেটা হচ্ছে, আয় বৈষম্য বেড়েছে। তার মানে, যেখানে প্রত্যেকের সমান সুযোগ থাকবে, প্রত্যেকের অংশগ্রহণ থাকবে, সেটা এখনো বাস্তবায়িত হয় নাই। আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছি, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবো। ওই অবস্থায় যেতে হলে আমাদেরকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। ব্যবধান কমাতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে, কিন্তু যেখানে যেতে চাই, সে অনুসারে হয়নি। আমাদের লেবার ফোর্সের কেবল প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে হবে না, দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। অশিক্ষিত ও প্রাথমিক শিক্ষিতদের টেকনিক্যাল নিয়ে যেতে হবে। গরীব লোকের কোনো একটা সমস্যা হলে তাদের পুরো পরিবার শেষ হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটার জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।
সাদিক আহমেদ বলেন, যেসব দেশে আয় বৈষম্য কমেছে, সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা শক্তিশালী। সেখানে সরকার আয়করের মাধমে বড়লোক থেকে কর নিয়ে গরীবদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে দিচ্ছে। নিম্নতম মজুরি একটা বিষয় আছে। কিন্তু এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। যারা তাদেরকে নিয়োগ করে, তাদের আয়ের সঙ্গে এটাকে সম্পর্কযুক্ত করে দিতে হবে। কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা কম থাকলে ন্যূনতম মজুরি দিলে আন এমপ্লয়মেন্ট বেড়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, জমি নিয়ে কত অসুবিধা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরীবদের জমি বড় লোকদের কাছে যাচ্ছে। রাজউক একটা জমি উন্নয়ন করছে, সবই যাচ্ছে বড়লোকদের হাতে। এটা সমাধান করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা, নেত্রকোনার সমস্যা সচিবালয়ে বসে বোঝা সম্ভব না।