প্রথম মুসলিম নারী বাজার পরিদর্শক

0
5

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন নারী মনীষা। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে একজন মুহাদ্দিস, শিক্ষক ও চিকিৎসক এবং ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নারী বাজার পরিদর্শক। তাঁকে প্রথম মুসলিম নারী শিক্ষকও বলা হয়। মহানবী (সা.) কখনো কখনো শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)-এর বাড়িতে দিনের বেলা বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। সেখানে তাঁর জন্য নির্ধারিত বিছানা ও পোশাক ছিল।

তাঁর পুরো নাম হলো শিফা বিনতে আবদুল্লাহ বিন আবদুশ শামস বিন আদি (রা.)। তাঁর প্রকৃত নাম লায়লা এবং উপনাম উম্মে সুলাইমান। শিফা তাঁর উপাধি। কিন্তু তিনি উপাধিতেই  প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তাঁর মা ফাতেমা বিনতে ওয়াহাব বিন আমর ও স্বামী মুহাম্মদ বিন সাআদ বিন মুনি হাশেমি। তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন। তারা হলেন সুলাইমান ও মাসরুক (রহ.)। তাদের মধ্যে সুলাইমান (রহ.) মুহাদ্দিস এবং মাসরুক (রহ.) প্রশাসক ছিলেন।

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) হিজরতের আগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম দিকে হিজরতকারী নারীদের অন্যতম। তিনি মহানবী (সা.)-এর হাতে বাইআতও গ্রহণ করেন। শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) জাহেলি যুগেই পড়ালেখা শেখেন। তিনি সুন্দর হস্তলিপির অধিকারী ছিলেন। তাঁকে সমকালীন আরব নারীদের ভেতর অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব মনে করা হতো। তিনি মদিনার মুসলিম শিশু ও নারীদের লেখাপড়া শেখাতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী হাফসা বিনতে ওমর (রা.) তাঁর কাছ থেকেই পড়া ও লেখা শেখেন।
মুসলিম হওয়ার আগে শিফা (রা.) ঝাড়-ফুঁক করতেন। মুসলিম হওয়ার পর তিনি বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর কাছে পেশ করে তা ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি চান। নবীজি (সা.) তাঁকে অনুমতি দেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে রোগমুক্ত করতেন বলে বলেই হাফসা (রা.) তাঁর নাম দেন শিফা।

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)-এর বাড়ি ছিল মসজিদে নববী ও বাজারের মাঝে। বাজারে যাতায়াতের সময় নবীজি (সা.) তাঁর বাড়িতে বিশ্রাম করতেন। কোনো জীবনীকার দাবি করেছেন, নবীজি (সা.) বাজারের নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথাও বলতেন। তবে এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। শিফা (রা.) নিজে ব্যবসা না করলেও তাঁর পাণ্ডিত্য, পণ্য ও বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও ব্যবসায়িক জ্ঞানের জন্য ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁকে হিসাবাহ তথা বাজার পরিদর্শক পদে নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম ইতিহাসের প্রথম নারী বাজার পরিদর্শক। তিনি সতর্ক দৃষ্টিতে বাজারের কার্যক্রম পরিদর্শন করতেন এবং কোনো অন্যায় হলে তা প্রতিহত করতেন। ইসলামী রাষ্ট্রে হিসাবাহ পদে নিযুক্তদের ব্যক্তির বিচারিক ক্ষমতা থাকে। যেমন আধুনিক যুগের ম্যাজিস্ট্রেটদের থাকে।

ইবনে বাদিস (রহ.) শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) সম্পর্কে লেখেন, ওমর (রা.) তাঁকে বিশেষ মূূল্যায়ন করতেন, সম্মান করতেন, বুদ্ধি-বিবেচনায় তাঁকে অগ্রগামী মনে করতেন। কেননা তিনি ইসলাম গ্রহণ, জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও মর্যাদায় অগ্রগামী ছিলেন। তিনি কখনো কখনো তাঁর বাজার বিষয়ক বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত করেন।

শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) একজন দক্ষ চিকিৎসকও ছিলেন। চর্মরোগের চিকিৎসায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নির্দেশ দেন তিনি যেন হাফসা (রা.)-কে চিকিৎসা বিদ্যা শেখান।

এই মহান নারী ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ২০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। মহান আল্লাহ জান্নাতে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। আমিন।

সূত্র : আসারু ইবনু বাদিস : ৪/১২৩; আল-ইসাবা : ৮/১২১; লুমআতুত তানকিহ : ১০/১১৮