নিউজ ডেস্ক:
দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পর কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয় ঠেকানো গেল না। রাজধানীতে গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের চামড়ার দাম ২-১০ টাকা।
ঢাকার জিগাতলা ট্যানারি মোড় ও পোস্তার আড়তে শনিবার দুপুর থেকে বিকেলে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেল। সব জায়গাতেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। অথচ গতবারের চেয়েও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম এবার ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে।
আড়তদার ও ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, চলতি বছর গতবারের চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম চামড়া আসবে। তাই চামড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। তার পরও চামড়ার দাম কম হওয়ার পেছনে পুরোনো যুক্তিই দেখাচ্ছেন তাঁরা ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া গত বছরের প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩ থেকে ১৫ টাকা করা হয় । আবার দরপতন ঠেকাতে ২৯ জুলাই কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিকেলে পুরান ঢাকার পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি পিকআপ ও ট্রাকে করে কোরবানির পশুর চামড়া আড়তে আসছে। দরদাম করে কিনছেন আড়তদারেরা। সেই চামড়া আড়তের ভেতরে নিয়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণে ব্যস্ত শ্রমিকেরা।
আজিমপুর থেকে পোস্তায় ঢোকার মুখে সড়কের পাশে বসে শফিকুর রহমান চামড়া কিনছিলেন। বললেন, বড় গরুর চামড়া ৫০০-৬০০ ও মাঝারি গরুর চামড়া ৩০০-৩৫০ টাকায় কিনেছেন। আর ৪ পিছ ছাগলের চামড়া কিনেছেন ১০ টাকায়। দামের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি কমই।’
বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০০-৫০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনে পিকআপে করে পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছিলেন হাজি শের মোহাম্মদ। বললেন, বড় গরুর চামড়া ৪০০-৬০০ টাকায় এবং ছোট ও মাঝারি গরুর চামড়া ১৫০-২৫০ টাকায় কিনেছেন।
গতবার চামড়া কিনে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়েছেন। তাই এবার তেমন ব্যবসায়ীরা মাঠে ছিলেন তুলনামূলক কম। মোহাম্মদপুর থেকে ১২-১৫টি গরুর চামড়া কিনে ভ্যানে নিয়ে পোস্তায় আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. শহীদ। বললেন, আকারভেদে ৪০০-৬০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। তবে কলাবাগান ও জিগাতলায় ব্যবসায়ীরা কেনা দামের কাছাকাছি বলায় বিক্রি করেননি। পোস্তায়ও বেশি দাম পাওয়ার আশা কম। শেষ পর্যন্ত তিনি মুনাফা করতে পেরেছেন কি না, জানা যায়নি।
পোস্তার আবদুল মাজেদ আড়তে কমিশন এজেন্ট মো. নয়ন ও তাজউদ্দীনের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, করোনার কারণে কোরবানির পরিমাণ অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে চামড়ার যে পরিমাণ আমদানি তাতে মনে হচ্ছে, ঢাকায় গতবারের চেয়ে বড়জোর ৫ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে।
বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া গড়ে ২৫-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। তাতে সরকারের নির্ধারিত দাম হিসাব করলে বড় চামড়া কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা, মাঝারি চামড়া হাজার টাকা ও ছোট চামড়ার দাম হয় কমপক্ষে ৬০০ টাকা। তার থেকে প্রক্রিয়াজাত, শ্রমিকের মজুরি ও আড়তদারের মুনাফা বাদ দিলেও যা দাঁড়ায় তার কাছাকাছি দামেও চামড়া বিক্রি হয়নি।
চামড়ার কম দামের কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচা চামড়া যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা ঠিকই আছে। কারণ প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৮ টাকা খরচ হয়। তা ছাড়া আড়তদারেরা নগদ অর্থের সংকটে আছেন। বেশির ভাগ ট্যানারির মালিক আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ করেননি।
দাম কম হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ছোট চামড়াই বেশি আসছে এবার। চামড়া প্রক্রিয়াজাতে লবণের খরচ আছে। কাটিংয়েও বাদ যাবে কিছু চামড়া। তা ছাড়া শেষ পর্যন্ত কী দাম পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন অনেক ব্যবসায়ী।
আড়তদারদের বকেয়ার বিষয়ে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই ট্যানারির মালিকেরা আর্থিক সংকটে আছেন। সে জন্য আড়তদারদের পাওনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে।
গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চামড়ার অস্থায়ী বাজারে ছোট গরুর একেকটি চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৫০০-৬০০ এবং বড় চামড়া হাজার টাকায় বিক্রি হয়। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ২৫০-৩০০ টাকার বেশি কোনো চামড়া বিক্রি হয়নি। পরদিন পোস্তায় ১৫০-২০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করতেও কষ্ট হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ঢাকার বাইরে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে চামড়া সড়কে ফেলে দেওয়া ও পুঁত