’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬৪)
কোরআনে বর্ণিত নবী-রাসুল
কোরআনুল কারিমে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সুরা আনআমের ৮২ থেকে ৮৬ নম্বর আয়াতে ১৮ জনের আলোচনা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—
১. ইবরাহিম (আ.)
কোরআনে ২৫ সুরায় ৬৯ বার তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম ছাড়াও ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মেও ইব্রাহিম (আ.) শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এ জন্য ইব্রাহিম (আ.) একই সঙ্গে বহু ধর্মের জনক। ইসলামে তাঁর কার্যক্রম স্মরণ করে ঈদুল আজহা, কোরবানি ও হজ পালিত হয়।
২. ইসহাক (আ.)
কোরআনের ১২টি সুরায় মোট ১৭ বার আলোচিত হয়েছে তাঁর নাম। তিনি ও তাঁর বড় সত্ভাই ইসমাঈল তাঁদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর মৃত্যুর পর আল্লাহর বার্তা প্রচার করেন এবং ইসলামের উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন।
৩. ইয়াকুব (আ.)
১০টি সুরায় ১৬ বার আলোচিত হয়েছে তাঁর নাম। তাঁর আরেক নাম ইসরাঈল। তাঁর নামানুসারে বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নামকরণ হয়েছে।
৪. নুহ (আ.)
২৮টি সুরায় ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯০০ বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁর জাতি ও ছেলে কেনানকে কুফরির কারণে আল্লাহ তাআলা মহাপ্লাবনে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
৫. দাউদ (আ.)
৯টি সুরায় ১৬ বার উল্লেখ হয়েছে তাঁর নাম। তিনি প্রাচীন ইসরায়েল রাজ্যের একজন ধার্মিক এবং ঐশ্বরিকভাবে অনুমোদিত রাজা হিসেবে ইসলাম ধর্মে সম্মানিত। হিব্রু-বাইবেল অনুসারে তিনি ইসরায়েল ও যিহুদা যুক্তরাজ্যের প্রথম রাজা, যার রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ১০১০-৯৭০ খ্রিস্টপূর্ব। তিনি নিজে রোজগার করে সংসার চালাতেন। তাঁকে ‘জাবুর’ কিতাব প্রদান করা হয়েছিল।
৬. সোলাইমান (আ.)
সাতটি সুরায় ১৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর নাম। কোরআন অনুসারে, তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজা। তিনি ছিলেন দাউদ (আ.)-এর পুত্র। তিনি জেরুজালেম থেকে সমগ্র পৃথিবী শাসন করেছিলেন। সুলাইমান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তাআলার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ। পশুপাখিদের ভাষা বোঝাসহ মুজিজাস্বরূপ বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন তিনি।
৭. আইয়ুব (আ.)
চারটি সুরার চার জায়গায় আলোচিত হয়েছে তাঁর নাম। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে কাসির (রহ.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি নবী ইসহাক (আ.)-এর দুই যমজ পুত্র ঈস ও ইয়াকুবের মধ্যে পুত্র ঈসের প্রপৌত্র ছিলেন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহর পরীক্ষা হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ায় আল্লাহ কোরআন শরিফে আইয়ুব (আ.)-কে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৮. ইউসুফ (আ.)
তিনটি সুরার ২৭ জায়গায় উল্লেখ হয়েছে তাঁর নাম। তিনি ইহুদি, খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত একজন পয়গম্বর। তিনি ইয়াকুব (আ.)-এর ১২ ছেলের ১১তম ছেলে। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে জানতেন। মিসরের অর্থ মন্ত্রণালয়সহ পুরো শাসনব্যবস্থা তাঁর হাতে ছিল।
৯. মুসা (আ.)
পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশিবার তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৪টি সুরায় ১৩৭ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। বনি ইসরাঈলের প্রথম নবী ছিলেন তিনি। জন্মের পর মুসা (আ.)-কে তাঁর মা বাক্সে ভরে নিল নদে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর কুদরত হিসেবে পরে তিনি জালিম বাদশাহ ফেরাউনের বাড়িতে লালিত-পালিত হন। নবী মুসা (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা অনেক মুজিজা দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একটি হলো মুসা (আ.) তাঁর হাতের লাঠি মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হতো। পরে তিনি সেটা হাতে নিলে আবার লাঠি হয়ে যেত।
১০. হারুন (আ.)
১৩টি সুরায় ২০ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনি নবী মুসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। বাগ্মিতায় পারদর্শী ছিলেন তিনি।
১১. জাকারিয়া (আ.)
চারটি সুরায় সাতবার উল্লেখ হয়েছে তাঁর নাম। ইসলামী বর্ণনাগুলো অনুসারে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের কাছে বাস করতেন এবং বনি ইসরাঈল বংশের ছিলেন। তিনি ঈসা (আ.)-এর মাতা মারিয়াম (আ.)-এর অভিভাবক ও লালন-পালনকারী ছিলেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র পুত্রসন্তান লাভ করেন, যার নাম ছিল ইয়াহইয়া। ইয়াহইয়াও একজন নবী ছিলেন। আর মারিয়াম ছিলেন ইয়াহইয়ার খালাতো বোন। তিনি পেশায় কাঠুরে ছিলেন।
১২. ইয়াইয়া (আ.)
চারটি সুরায় পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে তাঁর প্রসঙ্গ। তাঁকে কিশোর অবস্থায় আল্লাহ জ্ঞানী করেছিলেন এবং তাঁকে তাওরাতের শিক্ষা দিয়েছিলেন।
১৩. ঈসা (আ.)
১১টি সুরায় ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে তাঁর প্রসঙ্গ। তিনি বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। তাঁর আরেক নাম মাসিহ। আল্লাহ তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং কিয়ামতের আগে আবার পৃথিবীতে পাঠাবেন।
১৪. ইলিয়াস (আ.)
দুটি সুরায় তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর নাম। মানুষকে মূর্তি পূজা থেকে বিরত রাখার জন্য তাঁকে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মিশন দেওয়া হয়েছিল।
১৫. ইসমাঈল (আ.)
আট সুরায় ১২ জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। জন্মের আগেই তাঁকে বিজ্ঞ বলে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
১৬. ইয়াসা (আ.)
কোরআনে কারিমের দুটি সুরায় দুবার আলোচনা করা হয়েছে তাঁর প্রসঙ্গ।
১৭. ইউনুস (আ.)
দুটি সুরায় দুবার উল্লেখ হয়েছে তাঁর নাম। তাঁকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে তিনি দোয়া করার পর আল্লাহ তাআলা তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি নিনুওয়া এলাকার লোকদের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। পূর্ববর্তী সব নবীর বেশির ভাগ উম্মত তাঁদের সঙ্গে কুফরি করলেও ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সবাই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন।
১৮. লুত (আ.)
চৌদ্দটি সুরায় ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর নাম। তাঁর স্ত্রী কাফির ছিল। তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো পাপে লিপ্ত ছিল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
বাকি সাতজনের নাম কোরআনের বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—
১. আদম (আ.)
মোট ৯টি সুরার ২৫ জায়গায় তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী ছিলেন।
২. ইদরিস (আ.)
কোরআনের দুটি সুরায় দুবার উল্লেখ হয়েছে তাঁর নাম। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত তৃতীয় নবী। ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম কলম ও কাপড় সেলাই করার বিদ্যা আবিষ্কার করেন।
৩. হুদ (আ.)
তাঁর নাম তিনটি সুরায় সাতবার উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে আদ জাতির নিকট পাঠানো হয়েছিল। নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়কে প্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার পর সর্বপ্রথম তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাদেরকে প্রচণ্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেন।
৪. সালেহ (আ.)
তাঁর নাম চারটি সুরায় ৯ স্থানে উল্লেখ আছে। তাঁকে সামুদ জাতির কাছে পাঠানা হয়। সালেহ (আ.)-এর মুজিজা ছিল উটনি।
৫. শোয়াইব (আ.)
চার সুরায় ১১ বার উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর নাম। তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা মাপে বা ওজনে কম দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজাবপ্রাপ্ত হয়েছিল।
৬. জুলকিফল (আ.)
দুটি সুরায় দুবার আলোচিত হয়েছে তাঁর নাম। তিনি যে স্থানে ধর্ম প্রচার করতেন তা বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত।
৭. মুহাম্মদ (সা.)
চারটি সুরায় চার জায়গায় মুহাম্মদ এবং এক জায়গায় আহমদ নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তাঁর গুণবাচক নামে সম্বোধন করা হয়েছে। অথবা ‘আইয়ুহান নাবী’ কিংবা ‘আইয়ুহার রাসুল’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা বিশ্বনবী (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদার পরিচয় বহন করে।
নবী-রাসুলদের নামে সুরা
কোরআনে কিছু সুরা নবী-রাসুলদের নামে করা হয়েছে। এর সংখ্যা মোট ছয়টি। যথা :
১. সুরা মুহাম্মদ, ২. সুরা ইবরাহিম, ৩. সুরা ইউসুফ, ৪. সুরা হুদ, ৫. সুরা নুহ এবং ৬. সুরা ইউনুস।