মো: সুমন আলী খাঁন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ও আউশকান্দি ইউনিয়নের দুই জায়গায় গতকাল সোমবার ভোরে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রতিরক্ষা বাঁধ ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি জায়গা প্লাবিত হয়ে ১৫টি গ্রাম অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে। টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলেই বাঁধ ফাটল দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এসব এলাকার প্রায় ৪ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকার তিন হাজার একর রোপা আমন ধানের খেত তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় দুর্গত কিছু লোক গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বাধেরর মধ্যে স্থানীয় লোক রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছেন। কুশিয়রার ডাইকের বাঁধ ভেঙ্গে যেকোন সময় হবিগঞ্জের ৪ উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার একর রোপা আমন ধান ও ঘর বাড়ি তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে কুশিয়ারার নদীর পানি বেড়ে যায়। গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দীঘলবাক ইউনিয়নের রোশনপুর জামারগাও এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ২০ ফুট জায়গা ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।পরে এলাকাবাসী স্থানীয় ভাবে মেরামত করলেও ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে। এতে অকাল বন্যার পানিতে আউশকান্দি ও দীঘলবাক ইউনিয়নের জামারগাও,রোশনপুর,হুশেনপুর,,পাহাড়পুর,পাহাড়কুল,বনগাও,দীঘলবাক, কসবা, নতুন কসবা,বনকাদিপুর দূর্গাপুর ও ইছবপুর গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এদিকে ভোর পাঁচটার দিকে পার্শ্ববর্তী আউশকান্দি ইউনিয়নের বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় কুশিয়ারা নদের আরও প্রায় ৪০ ফুট জায়গা ভেঙে পানি ঢুকে আশপাশের ৫টি গ্রাম পাহাড়পুর,ঢালারপাড়,ব্রাম্মন গ্রাম, প্লাবিত হয়ে যায়।
সরেজমিনে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়পুর বাঁধের ভাঙনকবলিত অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। বাঁধের ওপর ১০-১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ রুবিনা বেগম (৭০) বলেন, ‘যে দিকে ভাঙছে এর কাছেই ঘর। ফজরর নামাজর সময় আখতা বান্দ (বাঁধ) ভাঙার শব্দ পাই। নামাজ পড়তাম পারছি না। বান্দো আইয়া সবাই উঠছি। মালপত্র কিছু বাইর করি আনছি। অখন ঘরোর ভিতরে গলাপানি।’
পাহাড়পুর গ্রামের রহিম উল্লা (৫০) বলেন, ‘ছয় কিয়ারো (বিঘা) খেত করছিলাম। ধানো থোড় আইছিল। সব ডুবাইলাইছে। পানি নামলেও খেত বাঁচানি যাইত নায়।’
একই এলাকার বাসিন্দা মোহন লাল দেব অভিযোগ করেন, প্রায় দুই বছর ধরে বাঁধের এ স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মাস খানেক আগে স্থানীয় উদ্যোগে বাঁধের কিছু জায়গায় মাটি ফেলে সংস্কারকাজ করানো হয়। কিন্তু, পানির তোড়ে তা টেকেনি।
আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন বলেন, ‘আমার এলাকার পাঁচ গ্রামের অন্তত এক হাজার মানুষ পানিবন্দী। ৭/৮শ একরের বেশি রোপা আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে আরও কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
দীঘলবাক ইউপির চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা বলেন, তাঁর এলাকায় বাঁধ ভেঙে ১২টি গ্রামের ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। কিছু লোক আশপাশের উঁচু জায়গা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কমপক্ষে ৩ হাজার একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজিনা সারোয়ার বলেন, তিনি ভাঙনকবলিত দুটি স্থান পরিদর্শন করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য প্রাথমিকভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পাউবোর হবিগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বিকেল পাঁচ টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, এলাকা তিনি সরেজমিনে বাঁধ পরিদর্শন করবেন। পানি নেমে যাওয়ার পর ওই দুটি স্থানে বাঁধে দ্রুত কাজ করানো হবে। এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।