শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

দুপুরে নিলামে উঠছে সাবেক এমপিদের আনা ২৪ বিলাসবহুল গাড়ি

নিলামে উঠানো হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্যদের আমদানি করা ২৪টি গাড়ি। ইতিমধ্যে আগ্রহীদের কাছ থেকে দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো সোমবার এসব দরপত্র খোলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এই নিলাম করে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।জানা যায়, নিলামে তোলা ২৪টি গাড়ির মধ্যে দর পড়েছে ১৪টিতে। গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন আগ্রহী ক্রেতারা। ১০টি গাড়িতে কোনো দর-ই জমা পড়েনি। নিলামে যে দর উঠেছে, তাতে এ দফায় কেউ গাড়ি পাচ্ছেন না।

সাবেক সংসদ সদস্যরা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছিলেন। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে এই গাড়িগুলো ফেলে যান সাবেক সংসদ সদস্যরা। সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টিসহ এ দফার প্রথম নিলামে মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হয়।

সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলো টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩৩৪৬। প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী প্রথম নিলামে এই দরের ৬০ শতাংশ বা তার বেশি যিনি সর্বোচ্চ দর দেবেন, তার কাছে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। এ হিসেবে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর পড়লে বিক্রির করার সুযোগ রয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্যদের কোনো গাড়িতেই এত দর পড়েনি। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দরদাতাই সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়ি পাচ্ছেন না।

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে একটি দরপত্র জমা পড়েছে। মাত্র এক লাখ দর দিয়ে এই গাড়ি কেনার অভিলাষ জানিয়েছেন মহসীন মোহাম্মদ কবির নামে একজন দরদাতা। এর মানে হলো, ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার গাড়ির নিলামে দর উঠল মাত্র এক লাখ টাকা।তবে সংসদ সদস্যদের গাড়ি কেনার জন্য হুড়োহুড়ি না থাকলেও নিলামে তোলা অন্য গাড়িগুলো কেনায় প্রতিযোগিতা ছিল বেশি। কোনো কোনো গাড়ি কেনার জন্য ২০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দর দিয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নিলামে পাওয়া দর যাচাই-বাছাই করে নিলাম কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

জানা যায়, নিলামে খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন এবং নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেনের (পাভেল) ফেলে যাওয়া গাড়িতে সবচেয়ে বেশি দর পড়েছে। দুই গাড়িতে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা করে দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এস এম আরিফ নামের একজন দরদাতা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর পড়েছে রংপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আসাদুজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে। এই গাড়িতে তিন দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। এই দর দিয়েছে ইজি সার্ভিসেস লিমিটেড।সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের ফেলে যাওয়া গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছে ল্যাবএইড লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান।

নিলামে তোলা সবচেয়ে দামি গাড়িটি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক। এই গাড়িতে সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছেন ফারাজ আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি।

গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে একটি দরপত্র জমা পড়েছে। মাত্র এক লাখ টাকা দর দিয়ে এই গাড়ি কেনার অভিলাষ জানিয়েছেন মহসীন মোহাম্মদ কবির নামে একজন দরদাতা।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা ও তারানা হালিমের গাড়ি ৫ লাখ টাকা, নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পড়েছে।নিলামে ওঠা সবচেয়ে কম দামি গাড়ি এনেছিলেন ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামান। এক বছরের পুরোনো এই টয়োটা গাড়ির নিলামে তাঁর গাড়ির দর উঠেছে ৫ লাখ টাকা।

যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. তৌহিদুজ্জামানের গাড়ি ২০ লাখ টাকা, গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীরের গাড়ি দেড় কোটি টাকা, জান্নাত আরা হেনরীর টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার পাঁচ লাখ টাকা দর পড়েছে।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের গাড়িও নিলামে তোলা হয়েছিল। তবে কেউ সাড়া দেয়নি। আরাফাতের মতো জামালপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোতালেবসহ ১০ জন সংসদ সদস্যের আমদানি করা গাড়িতে কোনো দর পড়েনি।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular