নিউজ ডেস্ক:মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বিদ্যুৎ না পড়লেও আজ মানুষ বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছেছে ঠিকই কিন্তু কর্তৃপক্ষের কিছু গাফিলতে রক্ত ঘামানো টাকায় খেসারত গুনতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকের। তেমনি মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দর্শনা শাখার দর্শনা পৌর এলাকায় বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মিটার না দেখে ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করে জনরোষে পড়েছে মিটার রিডার ইদ্রিস আলী। এতে দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ শাখা অফিস কর্তৃপক্ষ দ্বায় স্বীকার করছে প্রায়ই বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ৩ মাস যাবত দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মিটার রিডার ইদ্রিস আলী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের টাওয়ারপাড়ায় সময় মত মিটার রিডিং না করে নিজের খেয়াল খুশিমত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিটের রিডিং অফিসে জমা দেয়। সে মোতাবেক বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করে অফিস কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিল অতিরিক্ত হওয়ায় বিষয়টি টাওয়ারপাড়া এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তোলে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিটার রিডার ইদ্রিস আলী একই এলাকায় বিদ্যুৎ বিলের কাগজ বাড়ি বাড়ি পৌছে দিতে গিয়ে জনরোষে পড়ে। এ সময় বেশ কিছু গ্রাহক অভিযোগ করলে তাদের বিদ্যুৎ বিলের অপর পাতায় সংশোধনী ইউনিট লিখে দেয়। এতে জনগনের রোষানলে পড়ে ইদ্রিস আলী। তাৎক্ষনিকভাবে অফিস কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায় ইন্সেপেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বেশ কয়েকজন গ্রাহকের বাড়ী মিটার পরিদর্শন শেষে ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা পুনরায় আলাদা মিটার রিডার পাঠিয়ে মিটার চেকিং করে আপনাদের অতিরিক্ত ইউনিটের সমাধান করবো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরবর্তী মিটার রিডার আলাউদ্দিন যায় সরেজমিনে মিটার চেকিং করতে।
এসময় টাওয়ারপাড়ার দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে বিদ্যুৎ গ্রাহক বদরুল শাহ্ বাড়ির মিটার চেকিং’র সময় দেখা যায় বর্তমানে যে ইউনিট তার মিটারে উঠে আছে তার চেয়ে ৫৪ ইউনিট বেশি দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। একই এলাকার রেজাউল করিমের মিটার চেকিং’র সময় দেখা যায় বর্তমান ইউনিটের চেয়ে ২৮ ইউনিট বিদ্যুৎ বেশি খরচ দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। একই এলাকার ছাবেদা খাতুনের বর্তমান রিডিং’র চেয়ে ৪৫ ইউনিট বিদ্যুৎ বেশি খরচ দেখিয়ে বিদ্যুত বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া ওই পাড়ায় অধিকাংশ ব্যক্তি এ ধরনের অভিযোগ তুলে ধরে। তাছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ তুলে বলেন, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জনগনকে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। যা একজন খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১-৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করলে ইউনিট প্রতি ৪ টাকা করে বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। ৭৫-১২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করলে ইউনিট প্রতি ৫.৪৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। এর অধিক বিদ্যুৎ খরচ করলে প্রতি ইউনিট ৫.৭০ টাকা করে গুনতে হবে। এভাবে যার যত ইউনিট খরচ হবে তার ওই ইউনিটের ধাপ অনুযায়ী সেই হারে বিদ্যুত বিল দিতে হবে। এভাবে ৮টি ধাপে ইউনিটের হার ভাগ করা আছে। কিন্তু দেখা গেছে, বেশির ভাগ গরীব পরিবারের ৭৫ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় না। সেখেত্রে তাদের বিদ্যুৎ বিলেও দেখা গেছে খেয়াল খুশি মত অতিরিক্ত ইউনিট বসিয়ে ৭৫-১২৫ ইউনিটের ধাপে ফেলছে সেই গ্রাহকের। ফলে সময়মত রিডিং না করায় সঠিক ইউনিটে বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত না হওয়ায় শুভংকরের ফাঁকিতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ওই গ্রাহকদের।
এবিষয়ে দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ শাখা অফিসের এজিএম (কর্ম) অমিত দাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভুলের দ্বায় স্বীকার করে বলেন, জনবল কম থাকায় দর্শনাসহ এ অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া এ অফিসটি পরিচালনা করতে নি¤েœ ২০জন লোক প্রয়োজন সেখানে আমাকে ১২-১৩ জন লোক নিয়ে অফিস পরিচালনা করতে হচ্ছে। সময়মত বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করা বা চালু করার লোক পাওয়া যায়না। তাছাড়া মাত্র কয়েকজন মিটার রিডারদের ৬ হাজার বাড়িতে যেতে হয়। একজন মানুষের ভুল হতেই পারে। ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। এ ধরনের ভুল হলে ইতোপূর্বে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। তাহলে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায় এ সমস্যার কি কোন স্থায়ী সমাধান নেই, না কি সাধারন গরীব মানুষগুলি এভাবেই ঠকবে।