প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন করে দল গোছাচ্ছে তারা। পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সাজাচ্ছে ভোটের মাঠ। বর্তমানে তারুণ্যর শক্তিতে বিশ্বাসী বিএনপি। সামনের নির্বাচনে তাই শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিতে চান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, বিভিন্ন আসনে তরুণ নেতাদের নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার কথাও ভাবছে দলটি। যার অংশ হিসেবে সমমনা পাঁচটি দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে তাদের নির্বাচনী আসনে কাজে সহায়তার বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। সূত্রের খবর, সংসদ নির্বাচনে সমমনা দলগুলোকে সর্বোচ্চ ২৫টি আসন ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর দল গোছানোর লক্ষ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিএনপির। এজন্য ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৯ জন সিনিয়র নেতাকে। এছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা এবং তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে সারা দেশ সফর করছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতের সব সংস্কার কাজ শেষে দিতে চায় নির্বাচন। তবে বিএনপি তাগাদা দিচ্ছে নির্বাচনের। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এখন পর্যন্ত যতগুলো সাক্ষাৎ করেছেন, ততবারই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন তারা।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতার মতে, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষের প্রধান চাওয়া হলো সংসদ নির্বাচন করা। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। আমাদের নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। আমরা নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত।
জানা গেছে, নির্বাচনে বিজয়ের পর সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এছাড়া বিএনপির পূর্ব ঘোষণা অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার আলোকে নির্বাচনের পর সংসদে উচ্চকক্ষ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, একই ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়াসহ বেশকিছু পরিবর্তন আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভাসহ নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন দলের নেতারা। বিএনপি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দিয়ে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন।
নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নরসিংদী-৫ আসনে প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ফেনী-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক বর্তমানে সদস্য আবদুল লতিফ জনি, নাটোর-১ আসনে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক, জামালপুর-৫ আসনে স্বনির্ভরবিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, পটুয়াখালী-২ থেকে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন।
মাদারীপুর-৩ আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, নোয়াখালী-১ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, ঝিনাইদহ-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ, ঝিনাইদহ-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার, নেত্রকোনা-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক, নেত্রকোনা-৩ আসনে অ্যাব নেতা প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. মামুন বিন আব্দুল মান্নান সক্রিয় রয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম এবং ওবায়দুল হক নাসির, রাজশাহী-৫ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মোস্তফা, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, বগুড়া-৫ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডাইজারি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, নরসিংদী-৫ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল, মাদারীপুর-১ আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান নির্বাচনের মাঠ সাজাচ্ছেন।