নিউজ ডেস্ক:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এটি শুধুমাত্র একটি সরকারী কর্মসূচি নয়, সাধারণ মানুষের কর্মসূচি। দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের মানুষ ইতোমধ্যেই এই কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের গ্রিণ ভিউ সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে ‘আগামি দিনের দক্ষতা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইয়াফেস ওসমান এসব কথা বলেন।
স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই কর্মসূচি প্রথম যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন তা নিয়ে কেই কেই হাসি-তামাশা করেছিল। কিন্তু সাধারণ জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে তা বাস্তবায়নে সরকার মোটেও ভীত নয়। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য- প্রযুক্তির উন্নয়নের এই যুগে সমাজের মানুষের চাহিদা মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করতে সরকার সচেতন রয়েছে। বক্তৃতায় মন্ত্রী মানব সম্পদ পরিকল্পনা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেও মত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন, কারিগরী ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চভলনা করেছেন এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ব্যুরো ফর এমপ্লয়ার্স একটিভিটিস-এর সিনিয়র এডভাইজার জ্যাই-হি চ্যাং।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারি বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি লাভ করেছে এবং মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ও নানা উদ্ভাবনের হাত ধরে পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন এবং নানা উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে জানিয়ে এটুআই প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা বলেন, টানা ৪ বছর প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ওয়ার্ল্ড সামিট অন দি ইনফরমেশন সোসাইট (ডব্লিউআইসিএস) পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন সেবাখাতে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবন ও উন্নয়নের ফলে শিল্প ক্ষেত্রে খুব দ্রুত অটোমেশন ঘটছে জানিয়ে গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, এতে উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রযুক্তির ব্যবহার করে জনসাধারণের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। ই-গভর্ণমেন্ট প্রসেস স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং অংশগ্রহণের উন্নয়ন সরকার ও তার নাগরিকদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে শিল্পক্ষেত্রে ধীরে ধীরে মানুষের প্রয়োজন কমতে থাকবে। শিল্প কারখানাগুলো অধিকাংশই প্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়বে। আর এই উন্নয়নের ধারায় বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মত প্রকার করেন বক্তারা।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদনে ধরনের পরিবর্তন, কর্মক্ষেত্র এবং অর্থনীতিতে প্রভাব, ঝুকিপূর্ণ পেশা ও নতুন পেশাকে সামনে নিয়ে আসা এবং অটোমেশনের ফলে বেকারত্বের ঝুঁকি এড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ।
শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বর্তমান বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হচ্ছে জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, যার মূল ধারণা হল শিল্পের অটোমেশন বা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে শিল্পের অটোমেশনের ফলে যেমন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তেমনি বিলুপ্ত হচ্ছে সনাতন পেশার কর্মসংস্থান।
(বাসস)