নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অশিক্ষিতদের হাতে নেতৃত্ব পড়লে দেশের কী সর্বনাশ হতে পারে সেটা আমরা দেখেছি। তারা মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে, দুর্নীতি করতে পারে, লুটপাট, মানিলন্ডারিং করতে পারে।
নিজেদের বিত্ত বৈভব গড়তে পারে কিন্তু দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারে না। ’ গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস লাগে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর ক্ষমতায় আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা এমনি এমনি হয়নি। এটা হয়েছে বাবা-মায়ের কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, দেশকে ভালোবাসা, দেশের উন্নয়নে কাজ করা এবং দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার, যে কোনো ঝুঁকি নেওয়া। ’
প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবাই খুনিদের মদদ দিয়েছেন। খুনিদের পার্লামেন্টে বসিয়েছেন, তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন, পুরস্কৃত করেছেন। কেন? সেটাও বুঝি। আমাকে আঘাত দেওয়ার জন্য। আমি যাতে ভেঙে পড়ি সে জন্য। আমি কোন বাবার মেয়ে, কোন মায়ের মেয়ে সেটা জিয়া-এরশাদ-খালেদাসহ বিরোধীরা উপলব্ধি করতে পারেননি। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজকে আওয়ামী লীগ তিন বার সরকার গঠন করেছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ’ ছাত্রলীগের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের সঙ্গে রয়েছে আমার আত্মার সম্পর্ক। ছাত্রলীগের কাছে আসলে মনে হয় যে, মন খুলে কথা বলি। আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সামান্য সদস্য ছিলাম, একজন কর্মী ছিলাম। কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম। বলতে গেলে এটাই হচ্ছে মূল সংগঠন। ’
ভবিষ্যতের নেতা হতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা সব সময় বলতেন ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। এই কথাটা ছাত্রলীগ কখনো যেন ভুলে না যায়। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র, শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি। শিক্ষাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ভবিষ্যতে নেতৃত্বে আসতে হবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা পড়ারও পরামর্শ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক হয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগের এটাই কাজ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসবে এ চিন্তা তারা করেইনি। কারণ তারা চায়নি। ‘১৫ আগস্ট তারা কী চেয়েছে। বাবা-মা, ভাই সবাইকে হত্যা করেছে। ১০ বছরের ছোট শিশু এবং রাসেলকেও রেহায় দেয়নি। আমরা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। দেশে আসা নিষিদ্ধ ছিল। আমরা দেশে যেন ফিরতে না পারি সে চেষ্টা করা হয়েছিল। ’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করা, স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারদের এনে ক্ষমতায় বসানো হয়। লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো পতাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিসহ বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। যুদ্ধাপরাধী, যাদের সাজা হয়েছিল তাদের সবাইকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবে খুনি, সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। ’
’৭৫-এরপর ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কয়েকটা প্রজন্মতো হারিয়ে গিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজয়ের সঠিব ইতিহাস জানতেই পারেনি। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এত ত্যাগ স্বীকার করে দেশটাকে স্বাধীন করা হলো। আর সেই ইতিহাসটাকে বিকৃত করা হলো। ’
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এবং বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশের মানুষের মধ্যে একটা উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক বাধা দিয়েছিল আমি যেন দেশে ফিরে না আসি। ’
তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে উচ্চমহল একটু উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। ’ ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।
সূত্র : বিডি প্রতিদিন