স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ সাতক্ষিরার তালা উপজেলার বৃদ্ধ রহমত বিশ্বাস ও তার স্ত্রী নবীজান বিবি জানান, তাদের বড় মেয়ে ফরিদা বেগমের বিয়ে হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার বুয়াভাটিয়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম গফফার বিশ্বাস। শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে নানা ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করত। ফরিদা বেগমের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পিতা রহমত বিশ্বাসকে নিয়ে যাবার কথা বলে। খবর পেয়ে রহমত বিশ্বাসের ছেলে হায়দার বিশ্বাস বোনের বাড়িতে যায়। বোন ফরিদাকে খানিকটা অপ্রকৃতি ও অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন। যশোরে তালা উপজেলায় বাপের বাড়িতে নিয়ে আসার পথে ফরিদা তার ভাইকে বলেন, আমাকে বাপের বাড়ি নিয়ে গেলে তোরা সবাই পাগল হয়ে যাবি। আজ থেকে নয়দিন পূর্বে বাপের বাড়ি নিয়ে আসা হয় ফরিদাকে। এরপর থেকে বাপের বাড়ির সবাই একে একে পাগল হতে শুরু করে।
এদের মধ্যে রয়েছে রহমতের ছেলে আবদুস সবুর বিশ্বাস (২৫), আবদুল হালিম বিশ্বাস ( ২৮), আবদুল গফুর বিশ্বাস (১৬), ফরিদার মেয়ে আয়েশা খাতুন(৬), ফরিদার বোনের ছেলে যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে মেহেদি বিশ্বাস(১৩) ও ফরিদার বোন সালেহা খাতুন (১৪)। প্রতিবেশিরা জানান, শনিবার পর্যন্ত ৭ জনই পাগল হয়ে গেছে। বাড়ির অন্য সদস্যরা নিজেরাও পাগল হয়ে যাবার আতংকে রয়েছেন। তবে তারা সবাই ঝাড় ফুঁক ও কবিরাজী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রহমত বিশ্বাসের বাড়ি যেয়ে দেখা গেল শিকল বাঁধা অবস্থায় অস্বাভাবিক আচরণ করছে তারা।
এদিকে, পাগলদের কান্ড দেখতে রহমতের বাড়িতে ভিড় করছে গ্রামের মানুষ। খবর পেয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন সোমবার দুপুরে রহমতের বাড়িতে যান। নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন বলেন, তারা দৈহিক ভাবে সুস্থ, তবে মানসিক ভাবে অসুস্থ। মানসিক ভার সাম্যহীনের মতো আচরণ করছে তারা। অসংলগ্ন কথা বার্তা বলছে। কখনো কখনো মারমুখী আচরণ করছে। পুলিশের লোক তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি তাদেরকে তালা অথবা সাতক্ষীরা হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু বাড়ির লোকজন বলছে এসব জ¦ীনের দোষ। বাড়ির বাইরে পাঠালে আরো সমস্যা হবে। দুই ঘণ্টা ধরে তাদের বাড়িতে বসে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি আমরা। রহমত বিশ্বাসের প্রতিবেশি আবদুর রহমান ও জাহিদ বিশ্বাস জানান, ওরা এক সময় খুব গরিব ছিল। বছর কয়েক হলো তারা এখন ধনী পরিবার। দালান বাড়ি করেছেন, জমি কিনেছেন রহমত বিশ্বাস। তার মেয়ে সালেহা খাতুন খলিলনগর স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী। নাতি মেহেদি হাসান একই স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র। তারাও অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
রহমত বিশ্বাসের ছেলেরা চাষবাস করে। তারাও হঠাৎ বেসামাল হয়ে পড়ে বাড়িময় তান্ডব জুড়ে দিয়েছে। গ্রামবাসি বলছে, কিছুদিন আগে রহমত বিশ্বাসের বড় মেয়ে ফরিদা প্রসাদপুরের বিলের মধ্যে একটি স্বর্ণমুর্তি পেয়েছিল। সেই মুর্তি বিক্রির পর তারা অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। তখন থেকে প্রথমে ফরিদা ও পরে অন্যরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তবে রহমতের পরিবারের দাবি তাদের মেয়ে ফরিদাকে তদবির করে পাগল বানিয়ে ফেলেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দু পরিবারের ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।