অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে ওএইচসিএইচআর তাদের এই তদন্ত করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী ও নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা ব্যাপক এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ।
প্রতিবেদনে ওএইচসিএইচআর জানায়, আগের সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা, সহিংস আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে মিলে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। এর মধ্যে শত শত বিচার বহির্ভূত হত্যা, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের গুরুতরভাবে আহত করার মতো বলপ্রয়োগের ঘটনা, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, এবং নির্যাতনসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওএইচসিএইচআর ধারণা করছে, এই সমস্ত লঙ্ঘন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনের আরও একটি অংশে বলা হয়: ওএইচসিএইচআর ধারণা করছে, বিক্ষোভ চলাকালীন ১,৪০০ জনের মতো মানুষ মারা যেতে পারে, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত সামরিক রাইফেল এবং মারণক্ষম ধাতব গুলি দ্বারা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গুরুতর, প্রায়শই স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুলিশ ও র্যাবের মতে, ১১,৭০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয়েছে, বিক্ষোভগুলো যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন আওয়ামী লীগের সমর্থিত সশস্ত্র দলগুলো পুলিশের সাথে একত্রে বা খুব ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে অবৈধ সহিংসতা চালিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সারিতে বা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকত এবং পুলিশের সহিংসভাবে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে তাদের আক্রমণ শুরু করত। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিক্ষোভকারীদের আটকে পুলিশের হাতে তুলে দিত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে ৯৫ জন পুলিশ, আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্যের নাম ও পদবী প্রদান করেছে, যারা বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং ৭ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আগের সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ নিয়মিত আদালতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং দেশের বিচার বিভাগের সব সদস্যের প্রতি আইন ও ন্যায়বিচার বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য সকল সদস্য এবং লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।