নিউজ ডেস্ক: জীবননগরে সরকারীভাবে খাল খননের নামে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব। ভৈরব নদী খননসহ ছোট বড় বিভিন্ন জলাময় অবমুক্ত করনের অভিযান পরিচালনা করা হলে একটি গ্রুপ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে খাল খননের নামে ইটভাটা মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাটি বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক জানান, ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠছে তা সঠিক নয়। যে সকল নদী খনন করা হচ্ছে এবং সেখান থেকে যে সমস্ত ইটভাটার মালিক মাটি নিচ্ছে তাতে গাড়ি প্রতি ২৪০ টাকা দিতে হয়। একটি ড্রেজার মেশিন প্রতিদিন ১শ’ গাড়ি মাটি কাটতে পারে আর এই মাটি বিক্রির টাকা তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। এক ভাগ যেই ইউনিয়নে মাটি কাটা হয় সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দিতে হয় আর দুই ভাগ প্রশাসন ও দলীয় নেতাদের দিতে হয়। তিনি আরো জানান, যে টাকা দিতে হয় সেগুলো প্রতি তিনদিন পর নগদ প্রতিটি দপ্তরে দিতে হয়। সঠিক সময় মাটির টাকা না দিলে ইট ভাটার মালিকদের মাটি নিতে দেওয়া হয় না। তবে মাটির গাড়ি গণনার জন্য দুইজনকে ব্যবহার করা হয় এক জন মাটির গাড়ির নিকট দাড়িয়ে থাকে অপরজন রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে জীবননগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে খাল খননের কাজ চলতে থাকে। সম্প্রতি গত কয়েকদিন যাবত বৃষ্টির কারনে সেটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে রাখা হয়। ইতোমধ্যেই ধোপাখালী গ্রামে ভৈরব নদী খনন করা হলে সেখান থেকে নদী খননের মাটি উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের নিকট বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। একই অভিযোগ উঠেছে মানিকপুর বিল থেকে বালি উত্তোলন করে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে গাড়ি প্রতি বালি ক্রয় করছেন কিছু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যা বিভিন্ন রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ধোপাখালী, মানিকপুর বিলের মত উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের হাড়দার বিলে শুরু হয়েছে বিল খননের কাজ সেখানেও একই অবস্থা তবে হাড়দার বিলে ভিন্ন রকম অভিযোগ উঠেছে। শুকনোর সময় ডুমুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরিফ, বাচ্ছুর ছেলে জুলহাস, কালাচানের ছেলে কাউসার, মসলেমের ছেলে হারুন, আবুলের ছেলে কাশেম, শাজাহানের ছেলে মিলন, লিটন, রফিকের ছেলে রুবেল, যদুপুর গ্রামের শমসেরসহ বেশ কিছু দরিদ্র কৃষক ওই বিলে ধান ও পাট লাগিয়ে থাকেন। এবারও বিলে পাট লাগানো হয়। সম্প্রতি গত বুধবার রাতে কোন বিজ্ঞপ্তি ছাড়ায় রাতারাতি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিলের ভিতরে লাগানো পাট নষ্ঠ করাসহ বিলের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে আতিয়ার ও মৎস্য খামারী দেবেনের বিরুদ্ধে।
এদিকে মাটি কাটতে ড্রেজার মেশিন আনা আবদার জানান, ড্রেজার মেশিন আনতে আতিয়ার ও দেবেন বলেছে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে বিল টেন্ডার নিয়েছে তাছাড়া বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান জানেন এবং এই বিল থেকে চেয়ারম্যান সাহেব ১০গাড়ি মাটি একটি কলার বাজারে দেয়ার জন্য নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার বলেন, হাড়দার বিলের মাটি কাটার বিষয়টি আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। আমি বাইরে আছি বাড়ি এসে বিষয়টি বলতে পারবো। এ বিষয়ে মৎস্য খামারী দেবেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা ৫-৬জন মিলে ৬ বছরের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে মাছ চাষের জন্য গত এক বছর আগে হাড়দার বিল লিজ নিয়েছি। এ বিষয়টি ইউএনও স্যার জানে। আর যে ব্যক্তি পাট ক্ষতি করার অভিযোগ তুলেছে তারা এর আগেও বেশ কয়েক বছর জমি দখল করে ওই বিলে চাষাবাদ করছে। বেশ কয়েকবার নিষেধ করা সত্বেও তারা আবার ও বিলের মধ্যে পাট লাগায়। বিলটা যদি এখন খনন না করি তা হলে বৃষ্টির সময় খনন করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা জানান, বর্তমান সরকার বিভিন্ন মরা নদীগুলো খননের নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে কাজ শুরু করেছি। তবে বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর জমি দখল করে কিছু দরিদ্র ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করছে আমরা তাদের নিষেধ করেছি এবং অনেকের ক্ষতি পূরণ দিয়ে আমরা খননের কাজ করছি। তবে কোন ব্যক্তির ক্ষতি করে আমরা কোন কাজ করছি না আর পারঘাটা বিল কে খনন করছে এটি আমার জানা নেই। তাছাড়া যদি কোন ব্যক্তি সরকারী বিলের মাটি বিক্রি করে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, জীবননগর উপজেলার হাড়দার বিল লিজ দেওয়ার বিষয়টি আমার স্বরণে নেই। তবে অফিসে না গেলে সঠিক তথ্য বলতে পারবো না। এদিকে, জেলা প্রশাসকসহ উদ্ধতর্ন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে বিল খননের নামে দরিদ্র কৃষকের ফসল নষ্টসহ বিলের মাটি বিক্রি করায় এলাকার সাধারণ মানুষ হতবাক। আসলেই কি জেলা প্রশাসক তাদের নিকট মাটি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে না কি টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।