নিউজ ডেস্ক:
মন্ত্রীর পদ না ছাড়লে দল থেকে বহিস্কার হতে পারেন জাপার মন্ত্রিসভার তিন মন্ত্রী।
দলের সংসদীয় দলের সভায় এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো: চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি।জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও জাপার তিন মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা পদত্যাগের ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বললেও এখনই পদত্যাগ করতে রাজি নয় অপর দুই মন্ত্রী।
বর্তমানে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে। একই সঙ্গে মন্ত্রী সভায় জাপার তিন মন্ত্রী রয়েছেন। এই নিয়ে গত সাড়ে তিন বছর ধরে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বকে।
মঙ্গলবার রাতে সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় নেতার কক্ষে অনুষ্ঠিত জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। খোদ বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ আলোচনার সূত্রপাত করেন।
বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত তিন মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘তোমরা মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ কর। তোমাদের জন্য বাইরে মুখ দেখানো যায় না। মানুষ আমাদের নিয়ে সমালোচনা করে। মন্ত্রী পরিষদে থাকায় জাতীয় পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তোমরা দ্রুত পদত্যাগ করবা, নইলে দল থেকে বাদ দেয়া হবে।’
রওশনের এমন বক্তব্যের পর পরই কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, ‘আপনারা মন্ত্রী পরিষদে থেকে দলের কোনো লাভ হয়নি। আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করেন।’
তিনি বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতের দুই জন মন্ত্রী ছিলেন। তারা জামায়াতকে সারা দেশে সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু আপনারা তিনজন মন্ত্রী থাকার পরও জাপার কোনো লাভ হয়নি, বরং ক্ষতি হয়েছে। আপনাাদের কারণে দলের এবং নেতাকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আপনারা যদি দ্রুত পদত্যাগ না করেন তাহলে আগামী নির্বাচনে আমাদেরকে কড়া মাসুল দিতে হবে।’
এই সময় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেকটা নিরব ছিলেন, তখন জাপার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) আপনি কি বলেন, আপনার মতামতই চূড়ান্ত। জাতীয় পার্টির সকলে আপনার আদেশ মানতে বাধ্য। আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।’
তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, আমি তো আগেই ওদের বলেছি, ‘মন্ত্রী সভা থেকে ব্যাক (পদত্যাগ) করতে। তাদের জন্য আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তারা এখনই পদত্যাগ করুক। আমরা যদি সত্যিকারের বিরোধী দল হতে পারি তাহলে, আগামী নির্বাচনে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় পার্টির সকল সংসদ সদস্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।
এমনকি মন্ত্রী সভায় সদস্য স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) যা বলবেন, আমি তাই করবো। স্যারের বাইরে আমি কিছু না।’
তবে ভিন্নমত পোষণ করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু।
বৈঠকে ব্যারিস্টার আসিনুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এখনই পদত্যাগের সময় হয়নি। তাছাড়া আমাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে না। অনেক এমপি সংসদে সরকারের প্রশংসা করে বক্তব্য দেয়, তাদের বক্তব্যের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় না ? ’
একই কথা বলেন, মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আমরা বের হয়ে আসলে দলের লাভ হবে না, বরং ক্ষতি হবে।’