নিউজ ডেস্ক:
জান্নাত হলো চিরস্থায়ী। তার নাজ-নেয়ামত, ভোগবিলাস ও সকল মঞ্জিল মুমিনের জন্যে প্রতিদানস্বরূপ। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের দেওয়াল স্বর্ণ ও চান্দি দ্বারা নির্মিত, মাটি জাফরান ও মিশকের। উল্লেখ আছে, জান্নাতি হুররা দেখতে ইয়াকুত ও মারজানের মত হবে।
তাদের চেহারার উজ্জ্বলতা দৃষ্টি শক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তারা পোশাকে আয়না অপেক্ষা অধিক স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হবে। মামুলি একজনের গায়ের উজ্জ্বলতা মাশরিক ও মাগরেবকে আলোকিত করে তুলবে। প্রত্যেক হুরই সত্তর তা কাপড়ের পোশাকে সজ্জিত থাকবে, যার সূক্ষতার দরুণ তাদের রৈাপ্যসদৃশ পায়ের গোছা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হবে।
জান্নাতী হুরদেরকে আল্লাহ তায়ালা মিশক, জাফরান দ্বারা পয়দা করেছেন, আবেহায়াত দ্বারা খামির তৈরি করেছেন। বেহেশতী পুরুষের জন্য আয়নার দরকার হবে না। হুরের সর্ব শরীর, বুক, মুখ ও চেহারার নুরূনী আলোতেই তাদের আয়নার কাজ হবে। আকাশের বড় উজ্জ্বল তারার চেয়ে হুরদের মাথার চুল বেশি উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হবে।
হাদীসে আছে, একদিন ফেরেশতা জিব্রাঈল (আ.) এক হুরের রূপ দেখে বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন।
হুরদের ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য:
● জান্নাতের অন্যান্য নিয়ামতের ন্যায় হুরে ঈনও একটি নিয়ামত হবে।
● কোন কোন হুরে ইন ইয়াকুত ও মুক্তার ন্যায় লাল হবে।
● অতুলনীয় সুন্দরী সাথে সাথে হুরে ইনরা সতিত্ব ও লজ্জাশীলতায়ও নিজেরা নিজেদের তুলনীয় হবে।
● মানব হুরদেরকে ইতিপূর্বে অন্য কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। জ্বিন হুরদেরকেও্ ইতিপূর্বে কোন জ্বীন স্পর্শ করেনি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তথায় থাকবে আয়তনয়না রমণীগণ। কোন জ্বীন ও মানব পূর্বে যাদেরকে স্পর্শ করেনি। অতএব উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? প্রবাল ও পরাগ সদৃশ নারীগণ। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পলনকর্তার কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (সূরা আর-রহমান-৫৫/৫৬-৫৯)।
● হুরেরা এতটা লজ্জাশীল হবে যে, স্বামী ছাড়া আর কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।
● হুরেরা ডিমের ভিতর লুক্কায়িত পাতলা চামড়ার চেয়েও অধিক নরম হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের নিকট থাকবে আয়তলোচনা তরুণীগণ যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।’ (সূরা সাফফাত ৩৭/৪৮-৪৯)।
● জান্নাতের হুরেরা সুন্দর লাজুক চোখ বিশিষ্টা, মোতির ন্যায় সাদা এবং তাদের স্বচ্চতা ও রং এত নিখুঁত হবে যেন সংরক্ষিত স্বর্ণালংকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তথায় থাকবে আয়তনয়না হুরগণ। আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, তারা যা কিছু করত তার পুরস্কারস্বরুপ। (সূরা ওয়াক্বিয়া ৫৬/২২-২৪)।
● হুরদের সাথে জান্নাতি পুরুষদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিয়ে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরুপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর। তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিব। (সূরা তূর ৫২/১৯-২০)।
● হুরেরা তাদের স্বামীর সমবয়সী হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের নিকট থাকবে আয়তনয়না সমবয়স্কা নারীগণ। তোমাদের এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে বিচার দিবসের জন্য। (সূরা ছোয়াদ ৩৮/৫২-৫৩)।
● জান্নাতে স্বীয় স্বামীদের আনন্দ দানে হুরেরা গান গাইবে। আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: জান্নাতে আকর্ষণীয় চক্ষুবিশিষ্টা হুরেরা সঙ্গীত পরিবেশন করবে এ বলে: আমরা সুন্দর এবং সতী ও সৎচরিত্রের অধিকারিনী হুর। আমরা আমাদের স্বামীদের অপেক্ষায় অপেক্ষমান ছিলাম। (ত্বাবারানী, হাদিস নং -১৫৯৮)।
● ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের হুরদেরকে আল্লাহ বাছাই করে রেখেছেন। মোয়াজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: যখন কোন মহিলা তার স্বামীকে কোন কষ্ট দেয়, তখন আয়তনয়না হুরদের মধ্য থেকে মুমিন স্ত্রী বলবে যে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন, তাকে কষ্ট দিও না। সে অল্প দিনের জন্য তোমার নিকট আছে অতি শীঘ্রই সে তোমাদেরকে ছেড়ে চলে আসবে। (ইবনে মাযাহ, আলবানী, ১ম খণ্ড, হা: নং১৬৩৭)।
বুরাইদা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘আমি জান্নাতে প্রবেশ করার সময় এক যুবতী আমাকে অভ্যর্থনা জানাল, আমি তাকে বললাম, তুমি কার? সে বলল যে আমি যায়েদ বিন হারেসার জন্য। (ইবনে আসাকের, সহীহ আল-জামে সগীর, আলবানী. হা: নং-৩৬১)।
● লেখাগুলো নেয়া হয়েছে ‘জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা’ মুহাম্মদ ইকবাল কিলানি রচিত বই থেকে। (তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত)।